অভয়নগরে অপরিকল্পিত খননে ভৈরব নদে বেড়েছে ভাঙন

বিলীন ধর্মীয় স্থাপনা-ঘরবাড়িসহ কৃষিজমি

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগরে ভৈরব নদের ভাঙন -যাযাদি
যশোরের অভয়নগর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যবাহী নদের নাম ভৈরব। আর এই ভৈরব নদ ঘিরে উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রথম শ্রেণির এক নদীবন্দর, যার নাম হয়েছে নওয়াপাড়া নৌবন্দর। ব্যবসায়ীদের জন্য নদী ও বন্দর আর্শীবাদ হলেও অপরিকল্পিত খননের কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে দুই গ্রামের শত শত পরিবার। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, প্রায় দুইশত ঘরবাড়ি, ২৫ বিঘা কৃষিজমি, অসংখ্য গাছগাছালি ও একটি রাস্তা। এবার নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থল। বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃক ভৈরব নদে অপরিকল্পিত খননের ফলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলার বাঘুটিয়া ও শুভরাড়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী দুই গ্রামের মানুষ। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙন রোধে নেওয়া হয়নি সরকারি কোনো ব্যবস্থা। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে ভাঙনের পরিধি। তাই দ্রম্নত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার দাবি করেছেন ওই দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া ভূগিলহাট গ্রামের একটি কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, অসংখ্য ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গাছগাছালি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর অপর প্রান্তে বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃক খনন কাজ চলছে। এ সময় ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ নাঈম সরদার বলেন, পাঁচ বছর ধরে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তখন থেকে বর্তমানের ভাঙন অনেক ভয়াবহ। তিন বছর পূর্বে ঈদগাহ সংলগ্ন একটি রাস্তা নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে। এরপর এলাকাবাসী ও মুসলিস্নরা বাঁশ দিয়ে ভাঙন রোধে বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ভাঙন ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। ভূগিলহাট গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি মিলিয়ে প্রায় ১০ বিঘা সম্পত্তি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। বাকি রয়েছে শেষ আশ্রয়স্থল। একই অভিযোগ করেন রবিউলের প্রতিবেশী হারান বিশ্বাস, ফাতেমা বেগমসহ অসংখ্য পরিবার। বাঘুটিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ তৈয়েবুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃক অপরিকল্পিত নদী খননের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রম্নত নদী খননের বালি বা পলিমাটি বস্তাবন্দি করে ভাঙন রোধে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। অভয়নগর ইউএনও জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, নতুন যোগদান করেছেন। সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বিআইডবিস্নউটিএ, দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন করা হচ্ছে না। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ চলছে। অভয়নগরের পাইকপাড়া ভূগিলহাট ও শুভরাড়া গ্রামের ভাঙনকবলিত মানুষের অনুরোধে নদীর অপরপ্রান্তে খনন কাজ হচ্ছে। প্রয়োজনে খননের বালি বা পলিমাটি ভাঙন রোধে ব্যবহার করা হবে। তবে ভাঙন রোধে পাউবো কাজ করে থাকে। যশোর পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, 'আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী খননের কাজ করলে ভালো হতো। ভৈরব নদে ভাঙনের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। যত দ্রম্নত সম্ভব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'