দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে লোকবলের অভাবে ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা ও জনপ্রশাসন বিভাগ। সহকারী কমিশনার ভূমি প্রশিক্ষণে দীর্ঘ ছুটিতে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সহকারী কমিশনার ভূমির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। এ ছাড়া তিনি একাই উপজেলার ৬১টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একই ব্যক্তি উপজেলার চারটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে ফুলবাড়ী থানায় গত ১ মাস থেকে শূন্য পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পদটি। গত ৫ আগস্টের পর ৫ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বদলি হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে পদায়ন করা হয়নি। একইভাবে ১৪ জন পুলিশ সদস্যের পদও শূন্য রয়েছে। ফলে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ উপ-পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। এতগুলো জনবল ঘাটতি নিয়ে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ২৩০ বর্গকিলোমিটারে ২ লাখ জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত সরকার পতিত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেয়। এরপর থেকে উপজেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও মীর মো. আল কামাহ তমাল ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী টানা ৪০ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণে যাওয়ায় এ চারটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও মীর মো. আল কামাহ। এ ছাড়া গত ২০ আগস্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ভেঙে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউএনওকে।
পৌরসভায় সেবা নিতে আসা চক সাহাবাজপুরের আনেস সরকার বলেন, কর্মকর্তা নিয়মিত না আসায় একটি কাজের জন্য তাকে কয়েকদিন আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। একই কথা বলেন কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ওয়ারিশ সনদ নিতে এসে কর্মকর্তা না থাকায় ফেরত যেতে হচ্ছে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুল হুদা চৌধুরী বলেন, পৌর পরিষদ ভেঙে দেওয়ায় ইউএনও ও এসিল্যান্ড প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সে কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না। এর পরেও কোনো কাজ থেমে নেই।
ইউএনও মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই। রুটিন মোতাবেক তিনি কাজ করছেন।
এদিকে ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর ফুলবাড়ী থানার এসআই তন্ময়, আরিফুল ইসলাম, বদিউজ্জামান, মুকতাদির ও আবুল কালাম আজাদকে অন্যত্র বদলি করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুলতান মাহমুদকে। চলতি মাসের গত ১৫ অক্টোবর ওসি মোস্তাফিজার রহমানকে বদলি করায় পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) শূন্য হয়ে পড়েছে থানাটি। এছাড়া গত ২ মাসে ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হলেও নতুন করে পদায়ন করা হয়নি।
ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই আরিফুজ্জামান বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তাই সরকারি দায়িত্ব পালন করতে কোনো অসুবিধা হয় না।
জানতে চাইলে দিনাজপুর পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, অতিরিক্ত ফোর্স দিয়ে টহল দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হবে।