বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চাপে থাকা নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। তার মৃতু্যর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন সহকর্মীরা। এ ঘটনায় সর্বত্র আলোচনা চলছে।
জানা যায়- গত বৃহস্পতিবার অনার্সের ১ম বর্ষে ভর্তি ফি অতিরিক্ত আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানকে দেড় ঘণ্টা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও শিক্ষকরা তাকে মুক্ত করেন। এ সময় রোববার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান। শুক্রবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হন তিনি। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে গত রোববার কলেজ প্রাঙ্গণে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, রোববার অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তির ফি নিয়ে পূর্বনিধারিত ছাত্র-শিক্ষক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ কলেজে আসেননি। এ খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে অধ্যক্ষ না আসার কারণ ও অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি ফি কমানোর বিষয়ে জানতে চান। শিক্ষকরা অধ্যক্ষকের অনুপস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে শিক্ষকরা অধ্যক্ষের পরিবারের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের জানান, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের দু'দিন ধরে কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, ওইদিনই অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের স্ত্রী সৈয়দা সুলতানা আক্তার স্বামীর নিখোঁজের বিষয়টি উলেস্নখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নবীগঞ্জ থানা থেকে দেশের সব থানায় বার্তা পাঠানো হয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল খালেক জানান, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাওয়া গেছে। এসআই আরও জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জহির নামে জনৈক ব্যক্তি ফজলুর রহমানকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। এরপর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৭টায় মারা যান।
এদিকে, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃতু্যর কারণ জানা যায়নি। তার মৃতু্য নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবার তার মৃতু্যর ঘটনায় আন্দোলনকারীদের দায়ী করেছেন।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের সঠিক রিপোর্ট পেলেই মৃতু্যর মূল কারণ জানা যাবে।