তিন জেলায় বৃদ্ধসহ তিনজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বৃদ্ধকে পিটিয়ে, বগুড়ার গাবতলীতে কিশোরকে গলা কেটে ও নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রধান শিক্ষিকাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এছাড়াও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক ব্যক্তি ও চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় গার্মেন্টস কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ কাঠগড়া গ্রামে গত রোববার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে আব্দুল খালেক ভোলা (৭০) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহত ভোলার দৌহিত্র আলম মিয়া (৩৫) ও আলমের স্ত্রী রেখা বেগমকে (৩০) আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহত আব্দুল খালেক ওই গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে দাদা আব্দুল খালেকের সঙ্গে নাতি আলম মিয়ার বিরোধ চলছিল। ফলে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন বিবাদের একপর্যায়ে আলম ও তার স্ত্রী রেখা বেগম লাঠি দিয়ে দাদা আব্দুল খালেক ভোলার মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এদিকে স্থানীয়রা আলম ও তার স্ত্রী রেখাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাদের আটক করে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি সেলিম রেজা বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দু'জনকে আটক করা হয়েছে।
গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার গাবতলীতে ব্যাট খেলার দ্বন্দ্বে চাচাতো ভাই মোবাশ্বিরকে (১৩) জবাই করে হত্যা করেছে জ্যাঠাতো বড় ভাই। সোমবার গাবতলীর নাড়ুয়ামালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্থানীয়রা ঘাতক ভাইকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
একাধিসূত্র জানায়, গাবতলীর নাড়ুয়ামালা গ্রামের শফিলের ছেলে গাবতলী আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোবাশ্বির (১৩) সোমবার বেলা ১১টায় নিজঘরে শুয়ে ছিল। এ সময় আপন জ্যাঠাতো ভাই নাবিল আহম্মেদ (১৯) ঘরে ঢুকেই দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দেয়। এরপর নাবিল বিছানায় শুয়ে থাকা মোবাশ্বিরের মাথায় ব্যাট দিয়ে ২-৩টি আঘাত করে। পরে চাইনিজ চাকু দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে। স্থানীয়রা টের পেয়ে হত্যাকারী নাবিলকে আটক করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।
গাবতলী মডেল থানার ওসি আশিক ইকবাল বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘাতককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের লোহাগড়ায় সবিতা রানী মন্ডল (৫৫) নামে একজন প্রধান শিক্ষিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত।
গত রোববার গভীর রাতে উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের রথখোলা পাড়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নিহত সবিতা রানী মন্ডল উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের পরিতোষ কুমার মন্ডলের স্ত্রী। তিনি ৮৫নং চরদৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লোহাগড়া থানার ওসি আশিকুর রহমান সোমবার সকালে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের স্বামী পরিতোষ কুমার মন্ডল জানান, স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পূজা করার জন্য তিনি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতে গেলে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ পান। এতে সন্দেহ হলে স্ত্রীর রুমে গিয়ে দেখেন স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এনে বাইরের দরজার লক খুলে দেখতে পায় ঘরের পূর্ব পাশ দিয়ে দুর্বৃত্তরা সিং কেটে ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
তিনি আরও জানান, দুর্বৃত্তরা হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীর কাছে থাকা স্বর্ণের একটি বড় চেইন, দুটি হাতের বালা, একটি আংটি, একজোড়া কানের দুলসহ একটি ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে গেছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের একটি ফার্ম থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকার মিকাইল সিপারের ফার্ম থেকে এ লাশ উদ্ধার হয়। তবে এটি পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি পরিবারের লোকজনের।
জানা যায়, ভাটেরা ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকার বাসিন্দা (সাবেক সচিব) মিকাইল সিপারের ফিশারি ও ফার্মের দেখাশোনা করতেন একই গ্রামের বীরেন্দ্র মালাকার শুকু। সোমবার সকালে ফার্মের ভেতরে তার লাশ ঝুলতে দেখে পরিবারে খবর দেন পথচারীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পরিবার ও এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
শুকু মালাকারের ভাই নান্টু মালাকার অভিযোগ করে বলেন, তার ভাইকে হত্যা করে ফার্মে এনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে মিকাইল সিপারের ফার্ম-ফিশারিসহ সবকিছুর দেখাশোনা করে আসছেন। কুচক্রীমহল তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে মেরে ফেলছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাঠ থেকে মান্নান (৪০) নামের একজন গার্মেন্টস কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার হয়। নিহত আব্দুল মান্নান গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত হিরাজ মন্ডলের ছেলে।
জানা যায়, গত রোববার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন আব্দুল মান্নান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পরিবার তার সন্ধান পায়নি। পরদিন সোমবার সকালে লোক মারফত সংবাদ পান গ্রামের মাঠে মৃত অবস্থায় মান্নানের লাশ পড়ে আছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি হুমায়ূন কবীর জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহে মান্নান বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। রিপোর্ট পেলে তার মৃতু্যর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।