ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় বেশিরভাগ বেড়িবাঁধই রয়ে গেছে সংস্কারহীন। তার চেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলা শহরে বসবাসরত বাসিন্দারা। গ্রামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো আংশিক মেরামত করা হলেও অজানা কারণে উপজেলার প্রধান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন উদাসীনতাকে চরম অবহেলা বলেই দুষছেন এলাকাবাসী।
এদিকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'কে কেন্দ্র করে দ্বিগুণ আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে- ঘূর্ণিঝড় 'ডানা' আজ ও আগামীকাল (২২-২৩ অক্টোবর) থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার কথা রয়েছে। পূর্বের ঘূর্ণিঝড়গুলোর চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। সে আশঙ্কা থেকেই আতঙ্ক বেড়ে গেছে দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মানুষের মধ্যে।
উপজেলার প্রধান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ কোনোরকম মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা এলাকাবাসীর। তাদের ধারণা, ঘূর্ণিঝড় 'ডানা' আঘাত হানলে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে উপজেলা শহরে। এতে পস্নাবিত হয়ে পানিতে তলিয়ে যাবে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সবচেয়ে বড় বাজার হাজীর হাটবাজার, উপজেলা ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস ও তফসিল অফিসসহ সব সরকারি দপ্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। এ ছাড়া উপজেলার প্রধান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি দ্রম্নত সংস্কার করা না হলে জোয়ারের পানি ঢুকে হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দি হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভেঙে পড়বে বিদু্যৎব্যবস্থা। এতে হাজীরহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার বাসিন্দাদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে ধারণা করছেন সচেতনমহল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের ১১টি পয়েন্ট ভেঙে অন্তত ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯টি পয়েন্ট ভেঙে ৩ কিলোমিটার, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৩টি পয়েন্ট ভেঙে ১ কিলোমিটার ও ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের ৩টি পয়েন্ট ভেঙে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা, উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এখনো অরক্ষিতই রয়ে গেছে।
উপজেলা শহর হাজীরহাট ইউনিয়নের চরজ্ঞান গ্রামের বাসিন্দা বাবুল, কামরুল, মিজান, অহিদ, শাহাবুদ্দিন, সাইফুল ও কালাম বলেন, মনপুরা উপজেলা শহর রক্ষা প্রধান বেড়িবাঁধটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে ভেঙে গেছে। বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বললেও এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। যে কোনো মুহূর্তে সামান্য জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে যাবে হাজীরহাট বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বর। তাই দ্রম্নত প্রধান বেড়িবাঁধটি মেরামতের দাবি জানান তারা।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব, অলিউলস্নাহ, সাদ্দাম, সাইফুল, রুবেল বলেন, 'রেমালে আমাদের দখিনা হাওয়া সী-বিচসহ বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বহুবার অফিসে জানানোর পরও মেরামত করা হয়নি।' তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই এসব বেড়িবাঁধের কাজ হয়ে যাবে।
মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, 'মনপুরার মূল ভূখন্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের ব্যাপারে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করায় অনেক বিষয়ে আমি অবগত নই। উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের প্রধান শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি দ্রম্নত সংস্কার করা হবে।'