মেহেরপুরের গাংনীতে এখন 'না শীত না উষ্ণ' এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনে রোদের তাপ, শেষ রাতের হাওয়ায় হালকা শীতের অনুভূতি। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে। চিকিৎসকরা চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মানুষ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে রোববার মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ৯৮ জন ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ জন, শিশু ৬৫ জন এবং ২৫ জন নারী নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনো ঠান্ডা কখনো গরম। দিনে গরমের কারণে সমস্যা আর রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে বৈদু্যতিক পাখা চালানোর কারণে ঠান্ডা লেগে শরীরে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অসুস্থতা ও জ্বরের স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাইরের বিভিন্ন খাবার ও পানি খাওয়ায় ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।
সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে দেখা যায়, আউটডোরে রোগীদের দীর্ঘ সারি। টিকিট রেজিস্টারে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ৯৮ জন ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৫৬ জন রোগী ভর্তি। পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝে ও সিঁড়িতেও রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। শিশুদের কান্নায় স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। আর শিশুরা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত।
শিমুলতলা গ্রামের ইব্রাহিম জানান, তিনি তার ছেলে কাশেমকে (৪) নিয়ে তিন দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আছেন। ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রথমে হালকা জ্বর হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। পরে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। করমদি গ্রামের গৃহবধূ লাবনী তার মেয়ে ছয় মাস বয়সি আপিয়াকে নিয়ে ভর্তি আছেন ৭ দিন। আরও ৫ দিন থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এ ছাড়াও রোগী আরাফাত জানান, তিনি জ্বর ও ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক এম কে রেজা জানান, বর্তমান আবহাওয়ার কারণে জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেকেই আউটডোরে পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর যে রোগীর অবস্থা একটু সংকটাপন্ন তাকে ভর্তি রাখা হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ওষুধের কোনো সংকট নেই।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, আবহাওয়ার পালা বদলে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তাদের শরীরে পরিবর্তন বিশেষ ছাপ ফেলে। এক আবহাওয়া থেকে অন্য আবহাওয়ায় অভ্যাস হতে আমাদের সামান্য সময় লাগে। যতক্ষণ না আমাদের শরীর সেই পরিবর্তন মানিয়ে নিতে পারে ততক্ষণ শরীরে তার নানা প্রভাব পড়ে। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না। সেক্ষেত্রে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।