উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গত কয়েক দিনের চেয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমেছে। পানি কমায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন গ্রামবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পর তিস্তাপাড়ের মানুষের নতুন দুর্ভোগ নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও বেশ কিছু বসতবাড়ি, আবাদি জমি, ফসলাদিসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, চর খড়িবাড়ী, কিসামত ছাতনাই, খগা খড়িবাড়ী, ছোটখাতা বাইশপুকুরে খরস্রোতা তিস্তার ভাঙনে অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছে।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর খড়িবাড়ী মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ও নূর ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জমিসহ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার তীরে বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে তিস্তা খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের দোহলপাড়া গ্রামের নদী ভাঙনের শিকার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এবারের নদীর ভাঙনে মাথা গোঁছার ঠাঁই হারিয়ে যায়। বাপ-দাদার ভিটে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। কোথায় দাঁড়াব বুঝছি না।
আবু তাহের নামের বাসিন্দা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কারও কোনো নজর নেই। কখন যে নদী ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় সে ভয়ে আছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না ভয়ে। সন্তানদের নিয়ে রাতভর জেগে থাকি।
টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, তিন্তা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এভাবে ভাঙনের শিকার হয়ে আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।
নদী ভাঙনে ঘর হারানো ভুক্তভোগী একজন বলেন, আগেই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বেড়িবাঁধের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে জেগে ওঠা চরে ওপর দিয়ে খনন করে গতিপথ পরিবর্তন করা হলে পানির স্রোত আর এদিকে থাকবে না। কিন্তু আমাদের দাবির কথা কেউ শুনছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলস্না বলেন, বর্তমানে তিস্তা নদীর পানি কমায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেল মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নদী ভাঙন স্থানগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।