শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

বন্যায় ভবদহের পানিবন্দি এলাকায় মানুষ ও পশুর সহাবস্থান

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যশোরের মণিরামপুরে পানিবন্দি মানুষ রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করছেন -যাযাদি

পানিবন্দি ভবদহ বিল পাড়ের দুর্গত মানুষ রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস ও খাওয়াদাওয়া করছেন। শৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক কাজ সারতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষ।

অবশ্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কিছু টিউবওয়েল, স্যানিটেশন স্থাপন করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।

সম্প্রতি ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধ ভবদহ বিল পাড়ের হাজারো মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন রাস্তার উপর। ভবদহ বিলপাড়ের কমপক্ষে তিনশ' গ্রামের তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

সরেজমিন মণিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা, পদ্মনাথপুর, সুজাতপুর, হাটগাছাসহ একাধিক গ্রাম ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে। ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারা এসব ভুক্তভোগীর অনেকেই মণিরামপুর-নওয়াপাড়া সড়কের সড়কের উপর টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। একটু অবস্থা সম্পন্ন পরিবার যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাশের সাঁকো আর ডিঙি নৌকা বানিয়ে নিয়েছেন।

আর অস্বচ্ছল পরিবারগুলো রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গৃহপালিত পশুর সঙ্গে দিনাতিপাত করছেন। টংঘরের এক পাশে থাকছে গরু-ছাগল, আরেক পাশে চৌকি বানিয়ে রাত যাপন করছেন তারা। সেখানেই চলছে খাওয়াদাওয়া। প্রাকৃতিক কাজ সারতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

হাটগাছা গ্রামের ফুগী মন্ডল, মান্দারী মন্ডল, অধীর মন্ডল, ক্ষুদেরাম বিশ্বাস, গুরুদাস মন্ডল, মালতি বালাসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, আর কতকাল তারা এভাবে কষ্টে দিন যাপন করবেন। ভবদহ দিয়ে পানি সরে গেলে তাদের কষ্ট লাঘব হবে। কিন্তু কেউ তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। এভাবে বৃষ্টি হলেই বছরের পর বছর পানিবন্দি হয়ে গরু-ছাগলের সঙ্গে আর কতদিন একসঙ্গে দিন কাটাবেন তারা।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক উৎপাল বিশ্বাস বলেন, ল্যাট্রিন আর খাবার পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পানিবন্দি মানুষের বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়দেব দত্ত জানান, সংকট নিরসনে গেল সপ্তাহে দুর্গত এলাকায় ১০টি টিউবওয়েল ও ৪০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপনসহ ৫ হাজার বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজেন) বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে তিনি নিজেও জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে