৬১টির মধ্যে ৩৩টিতে নেই একাডেমিক ভবন
উন্নয়নবঞ্চিত ফুলবাড়ীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভবন সংকট থাকায় পাঠদান করা হয় গাদাগাদি করে। এ উপজেলায় মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, কলেজ-মাদ্রাসাসহ ৬১টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টিতে লাগেনি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়ায়, ভবন পায়নি অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ৩টি কারিগরি বিএম কলেজসহ মোট ৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে একটি ডিগ্রি কলেজ, একটি বিএম কলেজ, ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি নিম্ন মাধ্যমিক ও দুটি মাদ্রাসাসহ মোট ২৮টিতে নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গিয়ে দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোতে নতুন ভবন হয়নি, অথচ তুলনামূলক অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহুতল ভবন হয়েছে। এলাকাঘুরে দেখা গেছে, নারীদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি, বিএনপির নেতা হওয়ায় সেখানে কোনো সরকারি ভবন হয়নি। একইভাবে উপজেলা মাদিলা হাট কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাছান উদ্দিন মাস্টার হওয়ায় সেখানে হয়নি কোনো ভবন। একইভাবে উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছে পুখুরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ও ফুলবাড়ী বিএম কলেজ। এদিকে মাদ্রাসার অবস্থা আরও করুন। নতুন ভবন নেই বললেই চলে। উপজেলার ১৪টি মাদ্রাসার মধ্যে ভবন হয়েছে খাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসা ও খয়েরবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায়। ভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের অনুসারী হওয়ায় উপজেলার ১৪টি মাদ্রাসার মধ্যে ১২টিতে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এছাড়া ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টির ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ভোট কম পাওয়ায় সেখানে হয়নি কোনো বহুতল ভবন। একই ধারাবাহিকতায় ভবনবঞ্চিত হয়েছে উত্তর লক্ষ্ণীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চকসাবাজপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অম্রবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, খয়েরবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতপুর ইউনিয়ন বাকিলা উচ্চবিদ্যালয়, গোয়ালপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, রামভদ্রপুর উচ্চবিদ্যালয়, ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয়, সমসের নগর উচ্চবিদ্যালয়, খাজাপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তর জগন্নাথপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুরারীপুর উচ্চবিদ্যালয়। ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ দিনাজপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা খুরশিদ আলম মতি বলেন, ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজটি পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। নারী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, অথচ শুধু রাজনৈতিক কারণে কোনো সরকারি ভবন বরাদ্দ হয়নি। মাদিলা হাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু শহীদ বলেন, মাদিলাহাট কলেজটি তার পিতা মরহুম হাছান উদ্দিন মাস্টার প্রতিষ্ঠা করায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তিনি বলেন, 'উন্নয়ন না হলেও গত ১৭ বছরে এই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে আদালতের আদেশ অমান্য করে বসিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন সাবেক এমপি ও তার ছোট ভাই।' একই কথা বলেন নবগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নবীউল ইসলামসহ একাধিক শিক্ষক। জানতে চাইলে দিনাজপুর নির্বাহী শিক্ষা প্রকৌশলী এসএম শাহীনুর ইসলাম বলেন, 'তৎকালীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক, স্থানীয় সংসদ সদস্যর ডিও লেটার ও তালিকার উপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, গত ২০ অক্টোবরের পর তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানতে পারেন উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আগামীতে সরকারি বরাদ্দ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার সূত্রে বরাদ্দ দেওয়া হবে।