শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

তিতাসে ভেঙে পড়ার ২০ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু

পাকা সড়কের পর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো যাতায়াতে জনদুর্ভোগ
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কুমিলস্নার তিতাসে সোনাকান্দা গ্রাম সংলগ্ন খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো -যাযাদি

কুমিলস্নার তিতাসে ভেঙে পড়ার ২০ বছর পরও নির্মাণ হয়নি সেতু। পাকা সড়কের পর ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ১৩ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। দুই পাড়ের গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতিবছর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করলেও অদ্যবধি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা হয়ে নয়াকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। রাস্তার মাঝখানে একটি অর্ধভাঙ্গা পাকা সেতু উপর বাঁশের সাঁকো রয়েছে। সাঁকোর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ের পূর্বের ভাঙা সেতুর দুটি অংশের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে প্রায় ১৩ গ্রামের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করেন। নয়াকান্দি, ভাটিবন্দ, সোনাকান্দা, তড়িয়াকান্দি, বালুয়াকান্দি গ্রামের ফসলি জমির বর্ষার পানি খালটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোমতী নদীতে গিয়ে পড়ে।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন নারান্দিয়া ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তৎকালীন জিয়ারকান্দি গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস থাকায় নারান্দিয়া ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের লোকজনকে তাড়িয়াকান্দি-সোনাকান্দা ভায়া নয়াকান্দি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। তখনকার নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন সেলিম চেয়ারম্যান সোনাকান্দা গ্রাম সংলগ্ন খালে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করেন। এরপর ২০০৪ সালের বন্যায় পাকা সেতুটি ভেঙে যায়। বিগত ২০ বছরে ৩জন ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করলেও সেতুটি নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে খালটি পারাপার হচ্ছে।

নারান্দিয়া ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিবছর বর্ষার আগে খালের উপর ভাঙা সেতুর অংশে নয়াকান্দি ও সোনাকান্দা গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হয়। এবার আমরা সোনাকান্দা গ্রাম থেকে ৭ হাজার, নয়াকান্দি গ্রাম থেকে ৫ হাজার এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল বিল থেকে ৫ হাজার অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোটি দিয়েছি। সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় নয়াকান্দি থেকে ভাটিবন্দ হয়ে তাড়িয়াকান্দি দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে সোনাকান্দা গ্রামে মালামাল আনতে হয়।' নয়াকান্দি ও সোনাকান্দা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, নারান্দিয়া ইউনিয়নের কাল হলো গোমতী নদী। রাজনীতি ক্ষেত্রে এ নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। নদীর ওপাড়ে চেয়ারম্যান হলে এপাড়ের গ্রামগুলোর উন্নয়ন বন্ধ থাকে। আবার এপাড়ে চেয়ারম্যান হলে ওপাড়ের গ্রামগুলো উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকে। মূলত প্রতিহিংসার জনসেবার কারণে দীর্ঘ ২০ বছর সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হয়নি।

নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খোকা জানান, 'ইউনিয়নের মধ্যে এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। পাকিস্তান আমল থেকে এ সড়কটি মানুষ যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে আসছে। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর অর্ধেক রাস্তা তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা আব্দুল হকের বাড়ি পর্যন্ত পাকাকরণ করা হয়েছে। খালের উপর সেতু নির্মাণ ও বাকি অংশ পাকাকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'

তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, তাড়িয়াকান্দি থেকে নয়াকান্দি পর্যন্ত সাড়ে ১৮শ' মিটার সড়ক রয়েছে। এটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত রাস্তা। রাস্তার তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা আব্দুল হকের বাড়ি পর্যন্ত ৭৫০ মিটার সড়কের পাকাকরণ কাজ শেষ হয়েছে। সড়কের উপর সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে