সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার ভোলাগঞ্জ বাজারের ইজারা হস্তান্তরে শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাজারের ইজারা দ্বিতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের এই বাজার ইজারার ব্যাপারে দুটি পক্ষেরও ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য জানা গেছে।
মূল ইজারাদার বলছেন, জোরপূর্বক তাকে ইজারা হস্তান্তরে বাধ্য করা হয়েছে। অপরপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই মূল ইজারাদারের কাছ থেকে বাজারের ইজারা নেওয়া হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাজারের বৈধ ইজারাদার মানিক মিয়া বাজারটির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারান। এক পর্যায়ে মোমেন তালুকদার নামে এক ব্যক্তির কাছে বাজারের মালিকানা বিক্রিপূর্বক হস্তান্তর করেন তিনি।
তবে মানিক মিয়ার দাবি, মালিকানা হস্তান্তরের স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। শর্ত লঙ্ঘন করে অপরপক্ষ তার কাছ থেকে বাজারের দখল নিয়ে নেয়। এদিকে বাজারের মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানিকের ব্যবসায়িক অংশীদাররা। ভোলাগঞ্জ বাজার ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ইজারা প্রদানের জন্য চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি দরপত্র প্রকাশ করা হয়। ইজারার সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৬ টাকা। ইজারা লাভ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি যুবলীগ নেতা মানিক মিয়া। তিনি ইজারা মূল্য পরিশোধ করে সব শর্ত মেনে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের পর এক রাতে বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুজন মিয়া ও মধ্যনগর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মোমেন মিয়াসহ কয়েকজন পরিতোষ সরকারের বাড়িতে যান। মানিক মিয়া সেখানে মোমেনের নামে ১০০ টাকা মূল্যমানের চারটি স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে ভোলাগঞ্জ বাজারের মালিকানা হস্তান্তর করেন। হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন ২০২৩ অনুযায়ী হাট-বাজারের ইজারা মূল ইজারাদারের কাছ থেকে এভাবে অপরপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে তা ইজারার চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়। সে ক্ষেত্রে ইজারা বাতিলের বিধান থাকলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসেনি।
মানিক মিয়া জানান, মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে ইজারা হস্তান্তরের দলিলে স্বাক্ষর নেয়। ইজারা হস্তান্তর বৈধ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় তিনি বাজারে লোক পাঠিয়েছিলেন কালেকশনে। তবে তাদের কালেকশন করতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে মোমেন তালুকদার জানান, মানিক তার কাছে ভোলাগঞ্জ বাজারের ইজারা বিক্রি করেছেন। লিখিত দলিল রয়েছে প্রমাণ হিসেবে। তবে টাকার পরিমাণের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন জানান, ইজারাপ্রাপ্ত হাট-বাজার হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এমন কিছুর সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।