নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে অতিষ্ট জনজীবন। শাকসবজি থেকে শুরু করে ডিম, তেল, মাছসহ সব জিনিসের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। এদিকে, দাম নিয়ন্ত্রণের দাবিতে নোয়াখালীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন' নামের একটি সংগঠন। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে নোয়াখালীতে মানববন্ধন, সমাবেশ করা হয়েছে। বুধবার নোয়াখালীর টাউন হলের মোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নোয়াখালী জেলা কমিটির উদ্যোগে এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রান্তিক ও মধ্যবিত্তের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার লুটপাট মুক্তকরণ, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটবাজি রোধ, বিদু্যৎ, গ্যাস, তেল, পানি, মোবাইলের কলচার্জ, ইন্টারনেট, চাকরির আবেদন খরচসহ সব পাবলিক ও রাষ্ট্রীয় সেবার মূল্য কমানো, পণ্য পরিবহণে ট্রেন ও নদীপথ ব্যবস্থার সহজীকরণ, স্টোরেজ ব্যবস্থার সহজীকরণ, শুল্ক ব্যবস্থাকে উৎপাদন সহায়ককরণ, সরকার ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
এ সময় দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, গণ-অভু্যত্থানের নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। দেশ-বিদেশে হাজারও ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করার পথে সরকারের একটা প্রধান কাজ হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এ লক্ষ্যে সরকারকে সব সহযোগিতা করতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত।
জেলা কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শান্ত বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ২০১৮ সাল থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আজ রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি সবার মুখে মুখে। এর বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জনগণের পক্ষের রাষ্ট্র বানিয়েই ছাড়বে।
নোয়াখালী সুপার মার্কেট কমিটির সভাপতি ইকরাম উলস্নাহ ডিপটি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নোয়াখালী কমিটির সাধারণ সস্পাদক আবু নাছের মঞ্জু, সাংবাদিক এ আর আজাদ সোহেল, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য নফিউল ইসলাম মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন। কমিটির উপদেষ্টা নুর আহমেদ, সদস্যসচিব শামছুদ্দিন শিপন, সদস্য নুর আলম কিরণ, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন প্রমুখ মানববন্ধনে যোগ দেন।
এদিকে, বিশ্বম্ভরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিশ্বম্ভরপুরে শাকসবজি ও মাছসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দিন ধরে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে শাকসবজি, মাছসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলা সদর বিশ্বম্ভরপুর বাজার, ধনপুর বাজার, চিনাকান্দি বাজার, শক্তিয়ার খলা বাজার, পলাশ বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে বাজার মূল্যের একই চিত্র দেখা যায়।
বর্তমান হাটবাজারে শাকসবজির দাম হচ্ছে- আলু দেশি প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মুন্সীগঞ্জে আলু ৬০, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৫০০, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০, জিঙ্গা ৯০-১০০, পুরল ধুন্দুল ৮০-৯০, শসা ৬০-৫০, টমেটো ২৩০-২৬০, মিষ্টি লাউ প্রতি কেজি ৭০-৮০, পাতিল লাউ প্রতি পিস ১০০, করলা ৮০, কচু মুখি ৮০-৯০, পেঁপে ৪০-৫০, বটবটি ৯০ টাকা এবং অন্যান্য শাকসবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ ও মাংসের দাম হচ্ছে- বোয়াল মাছ ছোট ৪০০ -৫০০ টাকা, বড় ৬০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪০০-৫০০, শিং ৩৫০-৪৫০, গনিয়া ছোট ২২০, বড় ৪০০-৪৫০, বাইম ৬০০-৯০০, ছোট ৪০০-৫০০, মিনি মাছ ৫০০-৫৫০, পুটি মাছ ছোট ২০০, বড় ৪০০, রুই মাছ ৫০০-৮০০, মৃগেল ৫০০, কাতল ৫০০-৬০০ এবং হাওড়ের ছোট মিসলা মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়। সবজি ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার ও জসীমউদ্দীন জানান, 'বাজারে শাকসবজির আমদানি কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছি।' কৃষক আব্দুল আলী জানান, সম্প্রতি ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ার কারণে এলাকার শাকসবজি বিনষ্ট হওয়ায় সবজির দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।