শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
দিশাহারা কৃষক

কটিয়াদীতে ধানক্ষেতে মাজরা পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মাজরা পোকা ও পচন রোগে আক্রান্ত ধানক্ষেত -যাযাদি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আমন ধানক্ষেতে মাজরা পোকা, পচন রোগ ও ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ কারণে ফলন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা। তারা বলছেন, ধানক্ষেতে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে ৪-৫ বার কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। তারপরেও মাজার পোকা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন  জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার কারণে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ বেড়ে যাচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে মাজরা পোকা ও পচন রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোন, সরাসরি ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

সরজমিন দেখা যায়, উপজেলার বেশিরভাগ আমন খেতে মাজরা পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকার রাজত্ব। এদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে। এছাড়া গোড়া পচন রোগও আছে। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। অন্যদিকে চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে তাতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার জমির চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও পোকা দমন না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কয়েকদফা বালাইনাশক স্প্রে করার ফলে কৃষকদের গুনতে হসছে বাড়তি পয়সা। এরফলে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।

চারিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. মহসিন বলেন, এখনো ধানের গাছে থোর পর্যায়ে এসেছে। প্রতিবছর তিনবার বালাইনাশক ছিটালে আর দরকার হয় না। এখনো ধানের শিষ বের না হলেও এর মধ্যেই তিনবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। আরও কতবার যে স্প্রে করতে হয় কে জানে।

মসূয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, আমনক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণের পাশাপাশি খোল পচা রোগ ও ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। তবে আমনক্ষেত পুরোপুরি পোকামুক্ত হয়নি। গোড়া পচা রোগের বিনাশে কীটনাশকের কার্যকারিতা খুবই কম।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণ ও কৃষক ধানক্ষেতে সঠিক সময়ে নিয়মমতো কীটনাশক ব্যবহার না করায় পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষককে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম ভুঁইঞা জানান, উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। প্রতি বছরই মাজরা পোকার আক্রমণ হয়। আবহাওয়াজনিত কারণে এ বছর মাজরা পোকার আক্রমণটা একটু বেশি। তবে কৃষকরা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন ও গোড়া পচন রোধ করা সম্ভব। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যে কৃষক জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেছে তাদের জমিতে পোকার আক্রমণ এবং পচন রোগ কম। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ঈশা খান জানান, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু ও ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় জমির উর্বরতা ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে