রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

ভোলায় মাল্টা-কমলা চাষের নতুন দুয়ার

মোবাশ্বির হাসান শিপন, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)
  ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ভোলায় মাল্টা-কমলা চাষের নতুন দুয়ার

ভোলা জেলায় গত ৫-৬ বছর ধরে শখ করে কিছু বাসাবাড়িতে সবুজ মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা কমলার চাষ হয় না। তবে গত সিজন থেকে একসঙ্গে মাল্টা এবং কমলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সমতল ভূমিতে এসব ফল হয় না বলে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিভাবে মাল্টা এবং কমলা গাছের থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখে এ ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ফলে ভোলার সমতল ভূমিতে মাল্টা-কমলা চাষের নতুন দুয়ার খুলে গেছে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তারা।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটর দক্ষিণে কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ঘোলপাড়-রতনপুর সড়কের পাশে এক স্বপ্নবাজ যুব উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ গড়ে তুলেছেন ৩ একর জমির ওপর মাল্টা, কমলা বাগান। সঙ্গে আছে থাই পেয়ারা। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ মাল্টা বিক্রি হয়ে গেছে। কমলা হলুদ রং ধারণ করা শুরু হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে বিক্রি করা যাবে। উভয় ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও মিষ্টি ও সুস্বাধু। এর পাশেই আছে নানা জাতের বিশাল সবজি বাগান। সবজি বাগানের মধ্যে কাটা নালায় আছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ। প্রতিদিন দূরবর্তী এলাকা থেকে মানুষ নান্দনিক এ কৃষি ফার্ম দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় ছবি তোলে; ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কিছু বেকার যুবক বাগান করার পরামর্শও নিচ্ছেন।

সমগ্র ফার্ম পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ। ২০২২ সালে তিনি সরকারিভাবে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ অর্জন করেন। কৃষির ওপর বিভিন্ন স্তরে প্রশিক্ষণ রয়েছে তার। মাইনুদ্দিন মফিজ জানান, এ বাগানে প্রাথমিকভাবে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া কমলার জাতের মধ্যে আছে ভূটানী, চায়না থ্রি, কাস্মিরী-১। স্থানীয় বাজারে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। কমলা বিক্রি নামবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ প্রজাতিগুলো উত্তরবঙ্গের নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করেন। অতিবৃষ্টির কারণে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে আগামী সিজনে এ উৎপাদন আরও বেশি হবে।

জানা যায়, পড়াশোনায় মফিজ এসএসসির গন্ডি পেরোতে পারেননি। ২ বছরের এক কন্যাসন্তানের জনক। কৃষক মফিজ জানান, 'আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও। কৃষি কাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। বরই বাগান, থাই পেয়ারা, মাল্টা বাগান, সবজি বাগানে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো আমার বিনিয়োগ। দীর্ঘদিনের সঞ্চয়, পৌরসভায় দুই এলাকার জমি বিক্রির টাকা, এলাকায় জমি বিক্রি করে কৃষির দিকে ঝুঁকি। এ কাজে আমি আনন্দ পাই। ওই বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগ সব সময় তার পাশে আছে।

মাল্টাও কমলা বাগানের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল জানান, ভোলার মাটি অন্য জেলার তুলনায় ভালো। বিশেষ করে এ ধরনের মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তদারকিটা ঠিক থাকলে পোকা-মাকড় ও ছত্রাক আক্রমণ সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। মফিজের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। কৃষিবিভাগ প্রযুক্তি, পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে তার পাশে আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে