পাকা সড়কে খানাখন্দ আর কাঁচা রাস্তায় কাদা, বিপাকে তিন জেলার মানুষ

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
পাবনার আটঘরিয়ায় বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত জামতলা-পশ্চিমপাড়া কাঁচা রাস্তা -যাযাদি
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় তিন জেলার তিনটি সড়কে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। পাকা সড়কে খানাখন্দ আর কাচা রাস্তা কর্দমাক্ত থাকায় বিপাকে পড়ে ওই সব রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও পাবনার আটঘরিয়ার তিন সড়কের এ বেহাল অবস্থা। ভুক্তভোগীরা রাস্তাগুলো দ্রম্নত সংস্কারের দাবি জানান। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৩২ কিলোমিটারের বেশি আরসিসি সড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে চলাচলকারী লোকজন প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনার শিকার হাচ্ছেন। এর মধ্যে আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর সড়কে মুন সিনেমা হল থেকে বদলপুর ইউনিয়নের হিলালপুর গ্রাম পর্যন্ত, আজমিরীগঞ্জ-কাকাইলছেও রোডের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে রণিয়া পর্যন্ত এবং আজমিরীগঞ্জ- শিবপাশা সড়কের শূন্য চেইনেজ থেকে শিবপাশা পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা। এসব সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দ্বারা নির্মিত। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলাবাসীর যাতায়াতের প্রধান এ সড়কগুলো সংস্কার করার অল্পদিনেই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। অনেক স্থানে থাকা বড় গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। ফলে স্থানীয় লোকজন ও যানবাহন প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর সড়কের অটোরিকশা চালক আলমগীর মিয়া জানান, তিনি প্রতিদিন হিলালপুর, পিরিজপুর, বদলপুর ও পাহাড়পুর বাজারে যাত্রী আনা-নেওয়া করেন। রাস্তাটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কয়েক দিনেই গাড়ির যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। মাইক্রোবাস চালক জাহিদ মিয়া বলেন, 'পিরোজপুর থেকে যাত্রী নেওয়ার জন্য এসেছি। এমন ভাঙাচোরা আগে জানলে আসতাম না। গাড়ি যখন খানাখন্দে পড়ে, তখন মনে হয় কলিজাতে লাগে।' বদলপুর ইউনিয়নের রাখাল দাস জানান, কয়েক দিন আগে তার এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হলে গ্রাম থেকে একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে এই রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে, উপজেলা সদর থেকে কাকাইলছেও ইউনিয়নে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটিও ভেঙে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যোগাযোগের ভোগান্তিতে পড়েছেন কাকাইলছেও ইউনিয়নবাসী। যানবাহন চালকরা জানান, রাস্তাটির ভাঙাচোরার কারণে চলাচলে দুর্ভোগ হয়। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনায় শিকার হতে হয়। কয়েক দিন পরপর গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং টাকা খরচ করে মেরামত করতে হয়। শিবপাশা সড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন আসা-যাওয়া করেন। হাজারো যানবাহন চলাচল করে। লোকজনের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে সড়কটি শিগগিরই মেরামত করা জরুরি। এলজিইডি সূত্র জানায়, দপ্তরটির আওতায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ১৪৭ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সড়কের ৩১ দশমিক ৪২০ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে আজমিরীগঞ্জ থেকে শিবপাশা ৬ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার। কাকাইলছেও সড়কের ৬ ও দশমিক ২৫০ কিলোমিটার। পাহাড়পুর সড়কের ১৩ দশমিক ৯৭০ কিলোমিটার ও কাকাইলছেও থেকে রসুলপুর পর্যন্ত আরেকটি সড়কের ২ দশমিক ১০০ কিলোমিটার। উপজেলা প্রকৌশলী তানজির উলস্না আহমেদ সিদ্দিকী জানান, সড়কগুলো সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার সোহাগপুর গরুর হাট হইতে আজুগড়া জামাত মোড় সংযোগ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দেভরা। কোথাও সড়কে কার্পেট উঠে মাটি বের হয়েছে। আবার কোথাও সড়কটি ভেঙে যানবাহনের চলাচলে অযোগ্য হয়েছে। বিশেষ করে সোহাগপুর গরুর হাট এলাকা হতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদের বাড়ি পর্যন্ত চলাচলে জন্য একেবারে অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। ভগ্নদশা এই সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে পথচারীসহ মোটরসাইকেল, ভটভটি, সিএনজি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। আব্দুল মালেক, জহুরুল, রিজন, ইলিয়াস, জমের আলীসহ বেশ কয়েকজন পথচারী জানান, এ সড়ক দিয়ে পৌর এলাকার সোহাগপুর, বেলকুচি সদর, বড়ধূল ইউনিয়ন, মেঘুলস্না, আজুগড়া, এনায়েতপুর ও টাঙ্গাইলের মানুষজন যাতায়াত করে থাকেন। সড়কটি ভাঙা থাকায় যানবাহন ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে না। প্রায়ই এ সড়কের ভাঙা জায়গাগুলোতে অটোরিকশা উল্টে যাত্রীদের হতাহতে ঘটনা ঘটে। বড়ধূল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ জানান, গরুর হাট থেকে জামাত মোড় পর্যন্ত সড়কের এমনই বেহাল দশা যা দিয়ে পথচারীদের হেঁটে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে গেছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষের জন্য বেশি দুর্ভোগের কারণ হয়ে পড়েছে। চরের মানুষ অসুস্থ হলে সড়কটি ব্যবহার করে তাদের যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় রোগীবাহী গাড়িও উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমতাবস্থায় সড়কটি মেরামত হওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। বড়ধূল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছির উদ্দিন মোলস্না বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে সড়কটির ভগ্নদশা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সড়কটির সংস্কার কাজের ব্যাপারে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সড়কটি আমার ইউনিয়নবাসীসহ কয়েকটি ইউনিয়ের মানুষের অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সড়কটির দ্রম্নত মেরামত হওয়া প্রয়োজন। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন জানান, 'সড়কটি মূলত ওয়াপদা সংরক্ষণ বাঁধ হিসেবে নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় আনা হয়। অনেক বছর ধরে সড়কটির কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় চলাচলে প্রায় অযোগ্য হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই সড়কটি মেরামতের প্রয়োজনী নির্দেশনা পাব।' আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি হলেই কাঁচা রাস্তায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে লক্ষণপুর গ্রামের জামতলা থেকে পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত বৃষ্টি হলে রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। ফলে এলাকার সহস্রাধিক মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এছাড়াও মানুষের হাটবাজারে মালামাল পরিবহনে চরম বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা বিপাকে পড়ে, ক্লাস করতে পারে না। এ ছাড়াও কারো কোনো বিপদ হলে বা অসুস্থ রোগী নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। বৃষ্টির পানি ও কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।