ইসরায়েলি বর্বরতা তুলে ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আঁকা হয়েছে ক্যালিগ্রাফিতী 'তুফান'

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ফিলিস্তিনে ইসরাইয়েলি বর্বরতা ও ধংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আঁকা হয় ক্যালিগ্রাফিতী -যাযাদি
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা ও ধংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আঁকা হয়েছে একটি ক্যালিগ্রাফিতী। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'তুফান'। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল ক্যালিগ্রাফিতী। ইতোমধ্যে ক্যালিগ্রাফিতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই ক্যালিগ্রাফিতিটি তাদের ফেসবুকে পেইজে প্রোফাইল পিকটা বানিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে ছবি আঁকেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এর মধ্যে একটি ক্যালিগ্রাফিতি বেশ সুনাম ও প্রশংসা অর্জন করে। যার নাম ছিল 'স্বাধীনতার সূর্যোদয়'। পরে বৃহত্তর পরিসরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের দেয়ালে অঙ্কন করা হয় একটি আরবি শব্দের ক্যালিগ্রাফিতি। যেটি তখনকার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল। এটি অঙ্কনে সহযোগিতা করেছিল 'ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া' নামক একটি সংগঠন। চলতি মাসের (অক্টোবর) ১০ তারিখ অঙ্কন করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় ক্যালিগ্রাফিতি 'তুফান'। এটি অঙ্কন করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। জানা যায়, এই ক্যালিগ্রাফিতিটি অঙ্কন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফরিদপুর জেলার দুজন মাদ্রাসার ছাত্র। এদের নাম ওমর ফারুক ও উসাইদ মুহাম্মদ। ওমর ফারুকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার দাওরায় হাদিস বিভাগের ছাত্র। উসাইদ মুহাম্মদ ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে তাকমিল ফিল হাদিস (মাস্টার্স) বিভাগ শেষ করে বর্তমানে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে অধ্যয়ন করছেন। ওমর ফারুকের বাবা ফরিদ উদ্দিন সরকার একজন পুলিশ পরিদর্শক এবং মাতা ফিরোজা বেগম একজন গৃহিণী। উসাইদ মুহাম্মদ পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। বাবা হারুন অর রশীদ অটো মেকানিক্স, মা হালিমা বেগম গৃহিণী। ওমর ফারুক জানান, 'তুফান' ক্যালিগ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে শহরের শিমরাইলকান্দির পাওয়ার হাউস এলাকায়। এটি আঁকা হয় মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত পুরনো পাওয়ার হাউসের একটি ভবনে। যুদ্ধের সময় ধ্বংস হওয়া এই ভবনটি দেখে ফিলিস্তিনের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির কথা মাথায় আসে। আর সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ওই ভবনে ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিবেশ তুলে ধরার জন্য গত ৫ অক্টোবর ক্যালিগ্রাফিতির কাজ শুরু করি। বিশাল জরাজীর্ণ ভবনে ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ততা ফুটিয়ে তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা কাজ করি। অঙ্কনের শেষ ২ দিন নির্ঘুম কাজ করতে হয়েছে। এভাবেই নিরলস পরিশ্রমের পর ৭ দিনে কাজটি সমাপ্ত করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ছবিটিতে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ফিলিস্তিনের যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন- আল আকসা মসজিদ, ইসরায়েলি হামলায় বিভিন্ন দালানকোঠা ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া, ধোয়া উড়ছে। সেই ভবনের নিচে একজন সৈন্য হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ভবনের ওপরে উঠছে। চিত্রশিল্পী ওমর ও উসাইদের সহোদর সাঈদ সালমান জানান, চিত্রটি অঙ্কনের আগে ১ মাস বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়েছে। এই ভবনটিতে আল আকসার পরিবেশ কিভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় সেটি বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আলোচনা করি। এত বড় ভবনে এমন একটি অঙ্কনের খরচ ছিল ব্যয়বহুল। এলাকার লোকজনদের সহযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে এমন একটি ক্যালিগ্রাফিতি উপহার দিতে পেরেছি। এতে আমরা এতে গর্ববোধ করি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নুর বলেন, ওমর ফারুক ও উসাইদ মুহাম্মদ 'তুফান' নামে যে ক্যালিগ্রাফিতিটি অংকন করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার।