পোরশায় পটল চাষে সাফল্য

মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে গাছ আলু বা মেটে আলুর চাষ

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মেহেরপুর ও পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে বান পদ্ধতিতে চাষ করা 'গাছ আলু বা মেটে আলু' -যাযাদি
মেহেরপুরে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিকভাবে বান পদ্ধতিতে 'গাছ আলু বা মেটে আলু' চাষ করে সফলতা পান স্থানীয় কৃষক। ফলে চলতি বছর অনেক চাষি গাছ আলু আবাদ করেছেন। অল্প খরচ ও বাজারে চাহিদা এবং ভালো দাম থাকায় এবারও আলু বিক্রি করে লাভবানের আশা চাষিদের। মেহেরপুরে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিকভাবে 'গাছ আলু বা মেটে আলু' চাষ শুরু হয়। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বান পদ্ধতিতে আবাদি জমিতে এই আলুর চাষ শুরু করেছিলেন সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান। প্রথম বছর তিনি লাভবান হওয়ায় এ বছর অনেক চাষি এই আলুর আবাদ করছেন। চাষি হাবিবুর রহমান জানান, গত বছর তার ১৩ শতাংশ জমি থেকে ৮০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছেন। এবারও সেই জমিতে সে ২৬ হাজার টাকা খরচ করে আলুর আবাদ করেন। এখান থেকে তিনি তিন লাখ টাকার আলু বিক্রি আশা করছেন। একই গ্রামের চাষি ইমরান হোসেন জানান, প্রতি গাছ থেকে ৫-৯ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে চাহিদা থাকায় ৫০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। এছাড়াও এই আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় সবজি ব্যবসায়ীরা চাষির জমি থেকে আলু কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। বস্নক সুপার ভাইজার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুতুব উদ্দীন জানান, মেটে আলুতে রোগ এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শামুক ক্ষতি করে থাকে। হাত দিয়ে শামুক মেরে এর থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মেটে আলুর জীবনকাল ৮-১০ মাস। মাঠ পর্যায়ে যাতে এই আলুর চাষ ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, অন্য সবজির তুলনায় এই সবজি উৎপাদনে ঝুঁকি, রোগবালাই অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে মানুষের শারীরিক পুষ্টিহীনতা দূর করতে, সবজির ঘাটতি মেটাতে, পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বিষমুক্ত সবজি পেতে ও আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নে এ সবজিটি বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। একটু সচেতন হলে অতি সহজে কম খরচে সহজলভ্য সবজি মেটে আলু চাষ করা যায়- যা পুষ্টির অভাব পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, পটল চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর খোর্দ্দগানইর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী মন্ডলের ছেলে আফাজ উদ্দিন। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন প্রকার সবজিসহ নানা ফসল চাষাবাদ করে একজন সফল চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন। সরজমিন গিয়ে আফাজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সারা বছরই তিনি কোনো না কোনো ফসলের চাষ করেন। এর মধ্যে পটল তার প্রধান আয়ের উৎস। তিনি ভূমিহীন হওয়ায় স্থানীয় এক ব্যক্তির ৪৫ শতাংশ লিজ নিয়ে এসব ফসল ফলান। এবারও ওই জমিতে পটল চাষ করেছেন। তিনি এখন থেকে ৭ মাস আগে পটলের চারা রোপণ করেন এবং কার্তিক মাস পর্যন্ত সেখান থেকে ৩-৪ লাখ টাকার পটল বিক্রি করেছেন। ওই পটল চাষে খরচ করেছেন ৩০-৪০ হাজার টাকা। এতে তার খরচ বাদে ভালো লাভ হয়। এছাড়াও তিনি স্থানীয় প্রতিবেশীদের তার লাগানো সবজি দেন। তিনি আরও জানান, পটলের সময় শেষ হলে ওই জমিতে তিনি পেঁয়াজ চাষসহ পেঁয়াজের ফুল চাষ করেন। এতে তার ওই জমি থেকে ৫-৬ লাখ টাকায় আয় হয়। তার সবজি চাষে সাফল্যের পেছনে উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় তার ফসলে ছত্রাকের আক্রমণ ও পচনের কারণে ফসল নষ্ট হয়। কিন্তু নিজেই কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসল বাঁচান।