মনিটরিংবিহীন বাজারে বেপরোয়া বিক্রেতারা
লাগামহীন শাক-সবজির বাজার দিশেহারা নিম্ন-মধ্যবিত্তরা
প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
দিন দিন শাক-সবজির দাম বেড়েই চলেছে। লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এ অবস্থা বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার তিতাসে উপজেলা সদর বাজারসহ অন্যান্য হাটবাজারে অসহনীয় পর্যায়ে উঠেছে সবজির দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য তালিকা কাটছাট করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অনেকের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সবজি বিক্রেতারা।
সরেজমিনে কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভালো মানের কাঁচা মরিচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কালচে রংয়ের কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, বিলাতি ধনে পাতা ২৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি ধনে পাতা ৩৪০ থেকে ৪৭০ টাকা, শিম ২৪০ থেকে ৩২০ টাকা, কালো বেগুন ৬০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, মুলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেড়স ৭০ থেকে ১০০ টাকা, কাকড়ল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ থেকে ১০০ টাকা, জলপাই ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। বিশেষ করে লাল শাক, মুলা শাক, কলমি শাক, পালং শাক, ডাটা শাক আটি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, 'আমরা ঢাকার কারওয়ান বাজার ও কুমিলস্নার নিমসায় থেকে সবজি এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে সব সবজির দাম বেড়েছে। আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।'
উপজেলা পরিষদ চত্ব্বরে ঝালমুড়ি বিক্রেতা রাজাপুর গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, আগে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন, পায়ের সমস্যার কারণে এখন ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। ৫শ' টাকার বেশি প্রতিদিন আয় হয় না, আধা কেজি করে দুই ধরনের সবজি কিনলে দেড়শ' থেকে ২শ' টাকা খরচ হয়।'
কড়িকান্দি বাজারে সবজি কিনতে আসা একলারামপুর গ্রামের গৃহিনী মর্জিনা বেগম বলেন, 'আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ গরিব। এভাবে সবজির দাম বাড়লে কি করে সংসার চলবে, তাই সবজির তালিকা ছোট করতে হচ্ছে। আগে দুই-তিনটি তরকারি রান্না করলেও এখন শাক আর একটি তরকারি দিয়ে খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছি।'
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরা। প্রশাসন মনিটরিং কার্যক্রম গতিশীল করলে কিছুটা হলেও মানুষ সুফল পাবে।
তিতাস উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে আমরা বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাব।'
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর বদলগাছীতে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে কাঁচা বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ৭ দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে এই নিত্যপণ্যটির দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
গত শনিবার বদলগাছী সদর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সবজির বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬শ' টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. বেলাল জানান, বুধবার এই মরিচ ছিল ৪শ' টাকা কেজি। হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, শুনলাম বর্ডার বন্ধ। মরিচ ঢুকেনি। তাই দাম বেশি।
সরেজমিনে বদলগাছী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ১৩০ কেজি, আলু ৬৫ টাকা, বেগুন ১৪০, মুলা ৯০ টাকা, লাল শাক ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ঢেঁরস ৮০ টাকা, পটল একশ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ সবজির দাম বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন অনেক ক্রেতা। আব্বাস আলী, মজিবর রহমান, জামাল কাজেমসহ অনেক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, ??গত হাটে আড়াইশ' গ্রাম মরিচ নিয়েছিলাম ১০০ টাকা। আজ ১৫০ টাকা, চিন্তা করা যায়? সব কিছুর দাম বাড়তি।
এদিকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। ক্রেতা মৌমিতা আকতার তিষা, মেরিনা বেগম, রেজা মহরির স্ত্রী কবিতা, শামীমা আক্তারসহ অনেকে বলেন, আমরা নিম্নআয়ের মানুষ, এ রকম বাজার থাকলে সংসার চালানো বিপদ হয়ে পড়বে।
বিক্রেতারা বলছেন, শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, উৎপাদন এলাকায় চড়া সবজি দাম। শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। তবুও মোকামগুলোতে সরবরাহ কম। বন্যার কারণে সবজির জোগান কমেছে।
কৃষক আইজার রহমান বলেন, বাজারে সবজির দাম বেশি হলেও আমরা সেই দাম পাচ্ছি না। কারণ যেসব স্থানীয় ব্যবসায়ী আমাদের কাছে থেকে নিচ্ছেন তারা ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে কিনছেন। কিন্তু ঢাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ৪০ কেজিতে মণ হিসেবে দিচ্ছেন। তাহলে একজন ব্যবসায়ী ৩০ মণ সবজি কিনতে পাড়লে এখানেই তাদের ৬০ কেজি ও বস্তার ওজন বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ কেজি সবজি অতিরিক্ত থাকে। আমাদের জিম্মি করে সিন্ডিকেট করে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।