আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনের 'মূল কারিগর' মাহফুজ আলম হঠাৎ 'মাটি ফুঁড়ে' হাজির হননি বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
শনিবার তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'কেউ যদি ভেবে থাকেন, মাহফুজ আলম একা, তাহলে তারা মারাত্মক ভুল করবেন। আমরা যারা মাহফুজের সঙ্গে আছি, আমরা থাকবই। কারণ মাহফুজ হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে হাজির হয়নি। সমাজের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের মধ্য থেকেই তরুণরা হাজির হয়েছে। তারাই ভবিষ্যৎ।'
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকার যাত্রা করে। গত ২৫ আগস্ট নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইউনূস তার দীর্ঘদিনের বন্ধু বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে মাহফুজ আলমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরে সরকার পতন আন্দোলনের মূল কারিগর হিসেবে তুলে ধরেন।
মাহফুজকে আন্দোলনের 'মাস্টারমাইন্ড' বলায় অন্যদের ছোট করা হলো কি না, বা অতীতের মতোই রাজনীতির মাঠে কাউকে 'নায়ক' বানানো হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর মাহফুজ ফেসবুকে লেখেন, তাকে আন্দোলনের 'মাস্টারমাইন্ড' বলা হলেও আদতে তিনি তা ছিলেন না।
মাহফুজ আরও বলন, 'কিন্তু ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি সিদ্ধান্ত, ৯ দফা দাবিসহ আমার পরামর্শ এবং 'সমর্থন' ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে প্রায় সব অনুষ্ঠান ও বর্ণনা আমার হাতে লেখা।'
'সমাজকে চিনুন, মাহফুজদেরও চিনবেন' মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলছেন, 'মাহফুজ, আখতার, নাহিদ, আসিফ, নুসরাত, আকরাম, আরিফ, জাহিদ, তুষার, উমামা, হাসনাত, সারজিস, নাজিফা, আবু বকর, তরিকুল, সানজানাদের পয়দা করতে একটি জনগোষ্ঠীর দশকের পর দশক লেগে যায়।'
লক্ষ্ণীপুর উপজেলার রামগঞ্জের ছেলে মাহফুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে তিনি ক্যাম্পাসে পরিচিত। গত ২৮ আগস্ট তাকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
'গিবত গাইলে লাভ হবে না' মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, 'আমরা যারা সামনের দিকে তাকিয়ে এখনকার কথা বলি, আমরা বুঝতে পারি, তরুণদের কারণে বাংলাদেশের জগণের যে চেতনাগত উলস্নম্ফন ঘটেছে, তার ফল আমরা পাবই পাব। বাংলাদেশ আর পেছন ফিরে তাকাবে না। নিশ্চিত থাকেন। আমাদের কাজ তাদের পাশে থাকা এবং অনভিজ্ঞতাজনিত ভুল ধরিয়ে দিয়ে আরও সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাব নিশ্চিত করা। আমরা কেউই ফেরেশতা নই।'
ফরহাদ মজহার বলেন, 'রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বিশ্বসভায় আমাদের শিরদাঁড়া খাঁড়া করে দাঁড়াতে হবে, দাঁড়াতেই হবে। ভূরাজনীতি এবং নিউ লিবারেল পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রস্তুত। সামনে আরও কঠিন লড়াই লড়তে হবে।'