মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

মানুষের পক্ষে কথা বলতে মিডিয়ার সংস্কার প্রয়োজন

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে শনিবার 'মানুষের পক্ষে ব্রডকাস্ট মিডিয়া' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন -যাযাদি

গণমাধ্যম আইনের পাশাপাশি যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে গণমাধ্যমের মালিকানা ও পরিচালনা করা হয়, তার কিছু মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন এ খাতসংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠ সম্প্রচার ব্যক্তিত্বরা। শনিবার সন্ধ্যায় 'মানুষের পক্ষে ব্রডকাস্ট মিডিয়া' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই মত দেন। রাজধানী ঢাকার দৃকপাঠ ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। সঞ্চালনায় ছিলেন আইসিআরডির প্রতিষ্ঠাতা জীশান কিংশুক হক।

বৈঠকে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ওটিটি এবং অন্যান্য ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মসহ বাংলাদেশের সম্প্রচার ও ভিজু্যয়াল মিডিয়া সেক্টরে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর দৃষ্টি আরোপ করেন একাডেমিক বিশেষজ্ঞ, অ্যাকটিভিস্ট, সাংবাদিক এবং প্রযোজক, বিজ্ঞাপনদাতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আলোচকরা গণমাধ্যমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সেন্সরশিপ এবং আর্থিক সমস্যাসহ যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ নেক্সট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট ও ইনোভেশন সেন্টার ফর রিসোর্স ডাইভারসিটি (আইসিআরডি) সহযোগিতায় এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

এতে অংশ নিয়ে পাঠশালার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলম বলেন, 'মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি আগেও ছিল, এখনো আছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমরা তাকে 'গণমাধ্যম' বলতে পারব না।'

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, 'সরকারের তুলনায় বিজ্ঞাপন সংস্থা গণমাধ্যম বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো রেভিনিউ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে চ্যানেলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গণমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এই মাফিয়াতন্ত্রের অবসান করতে হবে।'

দেশে পে-চ্যানেলের নীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রেখে চ্যানেল ২৪-এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন বলেন, 'আমাদের গণমাধ্যমের নিজস্ব আয়ের জায়গা নেই। আমরা সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক বিজনেস মডেলে না গেলে চ্যানেলগুলো স্বাবলম্বী কখনোই হবে না।'

মিডিয়াকর্মী আব্দুন নূর তুষার বলেন, 'চ্যানেলের প্রাপ্য আয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একটা অবকাঠামো তৈরি প্রয়োজন। বহু প্রভাবশালী টেলিভিশনের মালিকরা পে চ্যানেলের নিয়মে যেতে চায় না।'

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, 'মিডিয়া কার কাছে জবাবদিহি করবে, সেটাও ভাবতে হবে। মালিকপক্ষের নীতিগত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত করবে কে, সেই প্রশ্নও তুলতে হবে। শ্রমিকপক্ষ, কর্মী ও মালিকপক্ষের মধ্যে ব্যবধান থাকলে আইন যতই করা হোক না কেন, সেটা কাজে আসবে না।'

এ প্রসঙ্গে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের সিওও মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, 'এজেন্সি ও টেলিভিশন সংস্থা কাজ করছে কোটানির্ভর হয়ে। আমরা এখনো আন্দাজনির্ভরভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। এখানে কোনো ধরনের ভিজিবিলিটি নেই।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মিডিয়ার 'ভ্যালু সিস্টেমের' ওপর গবেষণার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনার প্রস্তাব করেন। আর দ্য ডেইলি স্টারের চিফ বিজনেস অফিসার তাজদিন হাসান বলেন, সম্পাদকের মেরুদন্ড শক্ত হতে হবে। গণমাধ্যমে জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। মিডিয়ার একটা বড় বিনিয়োগ করতে হবে মার্কেট ডেভেলপমেন্টে। প্রথম আলো ডিজিটাল হেড জাবেদ পিয়াস মিডিয়ার মালিকদের প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়িক মডেলে বিনিয়োগের কথা বলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে