বাঁশখালীতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ
হুমকিতে ২৯৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ
প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী বেড়িবাঁধের গোড়া (জমি) থেকে মাটি কেটে অবাধে চলছে মাটি বিক্রি। অভিযোগ আছে, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পাশের ফসলিজমি থেকে মাটি এক্সেভেটর দিয়ে কেটে ডামট্রাকে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাটিখেকোরা। এ কারণে আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, 'খানখানাবাদ ৮নং ওয়ার্ড রহমত নগর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে (ফসলি জমি) ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেখলে মনে হয় বড় একটি পুকুর। ট্রাক্টর ও ডামট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহণ করায় চারদিকে খানাখন্দে ভরে গেছে। পাশাপাশি গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ডেবে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ। যার কারণে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে ২৯৩ কোটি টাকার উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ। এতে যে কোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে বাঁধ। তবে ঘটনাস্থলে কোনো ডামট্রাক বা ভেকু চোখে পড়েনি। জানা যায়, উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড রহমত নগর এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ফসলিজমি থেকে মাটি কেটে ডামট্রাক করে বিক্রি করছেন আনিছুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। প্রশাসন ও স্থানীয়রা বাধা দেওয়ার পরও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন তিনি। আনিছুর রহমান খানখানাবাদ ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে মাটি কাটার ধূম। বাধা দিলে হামলা ও নাজেহাল করা হয় সাধারণ মানুষকে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে সাময়িক মাটি কাটা বন্ধ থাকে। এরপর আবারও নির্দিষ্ট সময় টার্গেট করে কাটা হয় ফসলিজমি ও চরের মাটি।
এদিকে গত শুক্রবার বিকালে দ্রম্নত মাটি কাটা বন্ধ করে উপকূলের প্রাণ বেড়িবাঁধ রক্ষা করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন উপকূলীয় সচেতন নাগরিক সমাজ। এ সময় স্থানীয়রা বলেন, 'আজকের মধ্যে মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে। না হয় কাল থেকে যারা মাটি কাটতে আসবে তাদের আমরা এলাকাবাসী দেখে নেব। এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযুক্ত মাটিখেকোদের শাস্তির দাবিও জানান তারা।
অভিযুক্ত আনিছুর রহমানের দাবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে নিজেদের জমি থেকে মাটি কাটছেন তারা। তিনি বলেন, 'বেড়িবাঁধের পাশ থেকে নয়, বাঁধের ৩০০ ফিট দূরত্বে মাটি কাটা হচ্ছে। কদমরসুল হামেদিয়া দাখিল মাদ্রাসার নির্মাণকাজে মাটিগুলো দেওয়া হচ্ছে। সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীনের চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এ কাজের ঠিকাদার। জায়গাটিও ওনার। আমি শুধু ভেকু ও ডামট্রাক দিয়ে কাজ করছি। এতে আমি প্রতি গাড়ি ৬০০ টাকা করে পাই। তবে ঝামেলা হওয়ায় এখন কাজ বন্ধ রয়েছে।'
খানখানাবাদ ইউপির (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, 'মাটি কাটার খবর পেয়ে ইউএনও আমাকে ডামট্রাক ও ভেকু জব্দ করার নির্দেশ দেন। আমি চৌকিদারসহ ২০-২৫ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে যেতে তারা পালিয়ে যায়।' পাউবোর উপ-বিভাগীয় (বাঁশখালী) প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জানার পর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসিম উদ্দিন বলেন, 'খবর পেয়ে মাটি কাটার স্থলে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত করে স্থানীয় আনিছ ও সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। পরে ওই সাবেক চেয়ারম্যান ফোন করে ইউএনও'র কাছে মৌখিক অনুমতি নিয়েছেন বলে জানালে তাদের লিখিত অনুমতির কথা জানিয়েছি। আবার মাটি কাটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'