খাগড়াছড়িতে শিক্ষা পদক ঘোষণা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

খাগড়াছড়িতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৪ এ শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী নির্বাচন হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা। একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকও প্রকাশ করেছেন আক্ষেপ। জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর-২০২৪ তারিখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনার। অনেকেই বলছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মনগড়া পরিকল্পনায় শিক্ষা পদক ঘোষণা করেছেন। যেখানে বঞ্চিত হয়েছে জেলার মেধাবী, পরিশ্রমী, প্রতিভাবান ও উদীয়মান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা। জেলার দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মহালছড়ি উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা জানান, 'প্রতি বছর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পদকে জেলা পর্যায়ে যথাযথ নিয়ম বা প্রক্রিয়া মেনে শ্রেষ্ঠদের বাছাই করা হতো। প্রতিযোগিতায় আবেদনের পেক্ষিতে উপজেলা বা জেলা অফিসে ডাকা হতো, পরীক্ষা ও ভাইবা হতো। শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে পেশাগত জীবনের বিগত সময়ের কর্মতৎপরতা দেখা হতো। তারপর নির্দিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠদের নির্বাচন করা হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম শিক্ষা পদক নির্বাচনের জন্য কখন আমাদের ডাকা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে আছি পরীক্ষা ও ভাইবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এমন সময় জানতে পারি আমাদের এবং শিক্ষা পদকে অংশগ্রহণকারীদের কোনোরকম নোটিশ বা অবগত না করেই জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক লটারির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যা কখনোই যথাযথ প্রক্রিয়া মতে হয়নি। আমরা মনে করি জেলা শিক্ষা অফিসের এমন মনগড়া বাছাইয়ে প্রকৃত ত্যাগী, মেধাবী ও পরশ্রমীরা মূল্যায়িত হয়নি।' নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা (তাইদং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) মোছা. ফুলবানুর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, 'উপজেলা শিক্ষা অফিসে ডাকার পর নিয়ম অনুসারে পরীক্ষা ও ভাইবাতে উত্তীর্ণ হয়ে নির্বাচিত হয়েছি।' কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলছেন, 'কোনোরকমের পরীক্ষা বা ভাইভা হয়নি। কাউকে ডাকা বা অবগত করা হয়নি। উপজেলা পর্যায় থেকে বাছাই হয়ে তালিকাগুলো জেলা অফিসে আসে। জেলা পর্যায়ে পদাধিকার বলে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। বর্তমানে পরিষদ চেয়ারম্যান কর্মরত না থাকায় সবার সমন্বয়ে লটারির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠদের নাম ঘোষণা করা হয়।' জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন মজুমদার বলেন, 'শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন লটারির মাধ্যমে হতে কখনো শুনিনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যাদের লটারির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ঘোষণা করেছেন তা অনিয়ম এবং দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। তিনি একক সিদ্ধান্তে এটি করতে পারেন না। বিতর্কিত ফলাফল বাদ দিয়ে, নিয়ম ও পদ্ধতি অনুযায়ী নতুন করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকা নির্বাচন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।'