অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন মেহেরপুরের গাংনীর চাষিরা। অনাবাদী ও পতিত জমিতে লতিকচুর আবাদ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। শুধু লতি নয়, কচুর ফুল ও কন্দ বেশ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। কৃষি অফিস বলছে, চাষিদের লতিকচু চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ শুরু হয়। পরীক্ষামূলক চাষ করে লাভবান হওয়ায় এখন অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষ করছেন। অনাবাদি, পতিত ও স্যাঁতসেঁতে জমিতে অন্য কোনো আবাদ না হওয়ায় লতিকচুর ফলন ভালো হচ্ছে। অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এটির চাষ শুরু করেছেন। চাষের পদ্ধতি জানাতে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। উপজেলায় এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে লতিকচুর আবাদ হয়েছে। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় এটি পাঠাচ্ছেন। স্বল্প সময় উৎপাদন এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এই সবজি চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমিতে লতিকচুর চাষ করে ইতোমধ্যে অর্ধ লক্ষ টাকার লতি বিক্রি করেছেন। আরও লাখ টাকার লতি, মুখি ও ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করতে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। তিন মাসের মধ্যেই লতি বিক্রি শুরু হয়। পরে ফুল ও কন্দ বিক্রি হয়। একই সঙ্গে তিনটি সবজি পাওয়ায় লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। অল্প খরচেই বেশি লাভ পাওয়া যায়।
সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৪০-৫০ টাকা, ফুল ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লতিকচুর পাইকারি ক্রেতা আড়ৎদার সামাদ আলী জানান, লতিকচু উন্নতমানের সবজি হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একই কথা জানালেন আড়ৎদার রাজ্জাক ও ইনতাজ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতের ফলন বেশি। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় লতিকচু চাষ শুরু হয়। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশপাশে স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এই জাতের লতিকচু ঘন করে লাগাতে হয়। সব সময় জমিতে পানি রাখতে হয়। এটি করতে পারলে লতি ও ফুল বেশি পাওয়া যায়।