জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পঞ্চগড় জেলায় কোনো মানুষ মারা না গেলেও ঢাকা ও গাজীপুরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে একজন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তা এলাকার মুদি দোকানদার আবু ছায়েদ (৪৮)। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুনবস্তি প্রধানহাট গ্রামে।
গত ১৯ জুলাই দোকানের জন্য পলিথিন আনতে বের হয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ ছায়েদের পরিবার। তার ওপর মাথায় ঋণের বোঝা। অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। মাটির দেয়াল আর জোড়াতালির টিনের ছাউনির দুইকক্ষের দুটি ঘর তাদের অভাবের বড় সাক্ষী।
শহীদ ছায়েদের প্রথম স্ত্রীর গর্ভের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটের ১৫ শতক জমি, মাটির জরাজীর্ণ ঘর। তাও এই জমির ওপর গোপনে স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ছায়েদ। ৪৫ হাজার টাকার ঋণ এখন সুদে আসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ছেলে মামুনকে নিয়ে মাজেদা বেগমের এখন দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। শোক কাটিয়ে না উঠতেই অজানা ভবিষ্যতের শঙ্কায় কাটছে তাদের দিন।
পরিবার জানায়, ১০-১২ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন পঞ্চগড়ের আবু ছায়েদ। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী মাজেদা বেগম, মেয়ে শাহনাজ আক্তার ও ছেলে মামুন ইসলাম থাকতেন। ঢাকা থেকে তার পাঠানো টাকায় কোনোমতে চলত সংসার। পরে ঢাকায় আরেকটি বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন ছায়েদ। গত দুই বছর আগে মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট এলাকায় ভাড়া নিয়ে একটি মুদি দোকান দেন তিনি।
শহীদ আবু ছায়েদের ছেলে মামুন ইসলাম বলেন, 'গুলিটি আমার বাবার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। আমাদের সম্পদ বলতে বাড়িভিটেটুকুই। তাও আবার কৃষি ব্যাংকে দায়বদ্ধ। কীভাবে দুমুঠো খাব, সেই চিন্তায় আমাদের ঘুম হচ্ছে না। এর ওপর এই ঋণের বোঝা।'
আবু ছায়েদের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, 'ঢাকা থেকে আমার স্বামী যে অল্প কিছু টাকা পাঠাত, তাই দিয়ে কোনো মতো সংসার চলত। ছেলের লেখাপড়াও চলত সেই টাকায়। আমার স্বামী কোনো দলমতে ছিলেন না। কিন্তু ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষের সময় পলিথিন ব্যাগ আনতে বেরিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। বিনা কারণে নিরপরাধ মানুষটি মারা গেল। সঙ্গে আমাদেরও দুঃখের সাগরে ফেলে গেল। এখন সন্তানকে নিয়ে কীভাবে চলব, জানি না।'