খুলনায় যাত্রীর তুলনায় ইজিবাইক-রিকশা বেশি
অতিষ্ঠ নগরবাসী
প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মো. আতিয়ার রহমান, খুলনা
খুলনা নগরীতে একদিকে চলমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ, অন্যদিকে সড়কজুড়ে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য। এ দুইয়ে মিলে মুখ থুবড়ে পড়েছে নগরীর সড়ক ব্যবস্থাপনা। একইসঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
সরেজমিন দেখা যায়, নিউমার্কেট, শিববাড়ি, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, গলস্নামারী মোড়, ময়লাপোতা মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, সদর থানার মোড়, শান্তিধাম মোড় ও পিটিআই মোড়ে প্রতিনিয়তই লেগে থাকে যানজট। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ থেকে রোগী সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। প্রতিনিয়ত যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র হচ্ছে যে, কয়েক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি।
সকালে বটিয়াঘাটা থেকে খুলনা মেডিকেলে এসেছিলেন গৃহিণী ফারহানা। নগরীর তীব্র যানজটের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে এই অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে তিলোত্তমা খুলনা তার জৌলুস হারিয়েছে। কয়েক বছর আগেও খুলনা একটা শান্তশিষ্ট নগরী ছিল। এখন শহরের রাস্তায় চলাচল করা একেকটা ইজিবাইক মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে, শিগগিরই ঢাকার মতো খুলনাও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
খুলনার নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেঁজুতি তন্বী বলেন, নগরীর বিভিন্ন মোড়গুলোতে সবচেয়ে বেশি যানজট বাধে। খুলনাতে কেউই ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানে না, এমনকি কোন সড়কে সিগন্যাল বাতিও নেই। খুলনার সড়কে যদি, পুলিশের কঠোর অবস্থান ও আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে করা যায় তাহলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র বলছে, মহানগরে আট হাজার ইজিবাইক ও ১৭ হাজার রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, নগরীতে আট হাজার বৈধ ইজিবাইক থাকলেও সড়কে চলছে এর দ্বিগুণ। ভুয়া স্টিকার ব্যবহারসহ নানা উপায়ে চলছে অবৈধ এসব ইজিবাইক। ফলে মোড়ে মোড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী, ব্যহত হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, 'এই বিপুল সংখ্যক যানবাহনের কাছে আমরা অসহায়, নগরীর ট্রাফিকের বর্তমান যে অবস্থা তা নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সিটি করপোরেশনসহ একাধিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।'
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাইয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সবুজ রঙের ইজিবাইক চলবে এবং বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাল রঙের ইজিবাইক চলবে। এতে নগরীর যানজট কিছুটা হলেও কমবে।
খুলনা জেলার প্রধান ট্রাফিক কন্ট্রোলিং সমন্বয়ক নাঈম মলিস্নক বলেন, '৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম, সেসময় সাধারণ জনগনের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝতে পেরেছি, সড়কে সবচেয়ে বড় সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ ইজিবাইক। সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশন ইজিবাইকে বার কোডের আওতায় আনার জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর অবৈধ ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে আসবে।