বোরো মৌসুমে ধান ও খড়ের বাম্পার দাম পেয়েছেন কৃষক। দাম পেয়ে চলতি মৌসুমে বেশ আগ্রহ বেড়েছে আমন চাষে। বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে চলছে আমনের ভরা মৌসুম। পুরো মাঠ এখন সবুজে সমাহার।
আমনের শুরু থেকে এবার অতিবৃষ্টি হয়েছে। উঁচু-নিচু জমিতে বেশি বৃষ্টি পেয়ে খুশি হয়েছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। মনে অনেক আশা জেগে উঠেছিল ধান নিয়ে। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু মাঝামাঝি সময় এসে আমন ক্ষেতে গোড়া পচন রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকের সেই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হতে বসেছে। ক্ষেতে একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও পচন দমন করা যাচ্ছে না। এতে হাহাকার শুরু হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে। ক্ষেতে পচন দূর করতে না পেরে আমনের ফলন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী জেলার কৃষকরা বলছেন, এবার পচনসহ নানা ধরনের ব্যাধি ধরেছে আমন ক্ষেতে। একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও ফল মিলছে না। তাছাড়া ভেজাল কীটনাশকে সয়লাব বাজার। কৃষক চিনতে পারছেন না। এতে বেশি পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করায় আমন উৎপাদনে খরচও বাড়ছে। ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কাও আছে।
তবে মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আমনে পচন ও রোগবালাইকে এবার অতিবৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরমকে দায়ী করছেন। সেই সঙ্গে এবার গুটি, লাল স্বর্ণা ও একান্ন জাতের ধান বেশি চাষ করায় একেও একটি কারণ বলে মনে করছেন তারা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হচ্ছে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সাহাবুর রহমান। চলতি মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে তিনি একান্ন জাতের ধান চাষ করেছেন। শুরুতে ভালো ছিল।
কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে এসে তার আমন ক্ষেতের গোড়ায় ব্যাপক পচন ধরেছে। শীষ না ফুটতেই গোড়া থেকে শুকনো খড়ের মতো হয়ে গেছে। একাধিবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও পচন দূর করতে পারেননি। ফলে তার আমনের ফলন কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার চানন্দাল গ্রামের কৃষক মানিক জানান, তিনি এবার ১৮ বিঘা জমিতে লাল স্বর্ণা জাতের ধান চাষ করেছেন। তার ১৮ বিঘা জমিতেই পচন ধরেছে। তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হয়নি। তাতে তার ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পচন নিয়ে শুধু তানোর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সাহাবুর রহমান ও গাদাগাড়ী উপজেলার চানন্দাল গ্রামের কৃষক মানিকই নন, আরও অর্ধশত কৃষকের একই অবস্থা। আমন ক্ষেত নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা আমনে পচনসহ রোগব্যাধির কথা স্বাীকার করে বলেন, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টি হয়েছে। অনেক নিচু জমিতে পানি বেশি জমে থাকায় পচন ধরেছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভ্যাসপা গরমেও এমনটা হয়ে থাকে। তবে পচন খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে না। কৃষকদের ক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, অন্য বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য জেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ বেশি হয়। তবে বৃষ্টি বেশি হলে পচন রোগ হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।