বর্ণিল উৎসবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় -যাযাদি
বর্ণিল উৎসবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঢাকের বাদ্য, গান-বাজনায় ভক্তরা নেচে-গেয়ে রোববার নদীতে বিসর্জন দেয় দুর্গাপ্রতিমা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, ফেনীর পরশুরামে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দুর সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। মুহুরী নদীর স্টিল ব্রিজসংলগ্ন প্রতিমা বিসর্জন ঘাটে সকাল থেকেই মোতায়েন ছিল সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসারসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। শ্রী শ্রী মা মাতঙ্গী দেবী মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কান্তি সাহা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। পরশুরামে পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে। বিসর্জনের এই ক্ষণে মন্ডপে মন্ডপে বিদায়ের সুর। দুর্গাপূজায় মন্ডপে মন্ডপে দেবীদুর্গার আরাধনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। উপজেলার সাতটি পূজামন্ডপে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বিসর্জনের আয়োজন। পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে রোববার দুপুরে প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশে বিজয়া শোভাযাত্রা বের করে পরশুরাম বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে প্রতীমা বিসর্জন উপলক্ষে সকাল থেকে পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হাকিমের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ বিভিন্ন স্থানে টহল জোরদার করে। শ্রী শ্রী মা মাঁতঙ্গী দেবী মন্দির উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব কুমার সাহা বলেন, বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুরে ভক্তরা বিভিন্ন এলাকার পূজামন্ডপ থেকে পিকআপে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে থাকে। পরে প্রতিমা মুহুরী ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব সাহা বলেন, এ উপজেলায় সাতটি মন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা হয়েছে। এ বছর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে ২৯টি পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার ভোর থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২৯টি পূজামন্ডপের প্রতিমা করতোয়া ও মাইলা নদীতে বিসর্জন দেন বিভিন্ন মন্ডপের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইউএনও রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ঘোড়াঘাট থানার ওসি নাজমুল হকসহ পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার শেষদিনে রোববার ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বর্ণিল উৎসবে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পৌর শহরের সব প্রতিমা আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্তসাগর পুকুরে, ডৌহাখলার স্ব স্ব পুকুরে, শ্যামগঞ্জের পূজামন্ডপের প্রতিমা মইলাকান্দা গোবিন্দ বণিকের পুকুরে সহনাটীর পূজামন্ডপ প্রতিমা জলবুরুঙ্গা নদীতে ও ভাংনামারী ইউনিয়নের প্রতিমা ব্রহ্মপুত্র নদে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় ইউএনও শাকিল আহমেদ, এসি ল্যান্ড ও পৌর প্রশাসক সুনন্দা সরকার প্রমা, গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাযহারুল আনোয়ারের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন সরকার বলেন, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-প্রশাসন ও সবার সহযোগিতায় আনন্দঘন পরিবেশে এ উৎসব উদযাপনের জন্য পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।' প্রতিমা বিসর্জন ও মন্ডপ পরিদর্শন করেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখল চন্দ্র সরকার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল হক, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, বিএনপি নেতা আলী আকবর আনিস, হাফেজ আজিজুল হক, হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ প্রমুখ। তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার তালায় টানা পাঁচ দিন ধরে ঢাকের বোল, কাঁসরের ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনি আর পুণ্যার্থীদের সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকা পূজামন্ডপগুলো নীরব হয়ে পড়েছে। রোববার মধ্যাহ্নের পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। তালার অন্যতম মাঝিয়াড়া মহাশ্মান মন্দিরের পূজারি প্রকাশ ভট্টাচার্জ জানান, দশমী পূজা ছিল ভোর ৬টা ১৩ মিনিট থেকে শুরু হয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত। এর মধ্যেই বিভিন্ন মন্দিরে দশমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর দর্পণ বিসর্জনের ভেতর দিয়ে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দর্পণ বিসর্জনের পরে তালার বিভিন্ন মন্দিরে বিবাহিত নারীরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তালা উপজেলার স্থায়ী মন্দিরগুলোতেই সিঁদুর খেলার আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর তরুণীরা সিঁদুর খেলায় অংশ না নিলেও দেবীকে বিজয়ার প্রণাম জানাতে অনেক তরুণ তরুণী মন্দিরগুলোতে আসেন। তালা কেন্দ্রীয় মহা শশ্মানের সভাপতি কল্যাণ বসু বলেন, এবার তারা মন্ডপ তৈরি ও সাজসজ্জায় দেশি ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের প্রাধান্য দিয়েছেন। শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শিবালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজা শেষে রোববার বিকালে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন। উপজেলা বাংলাদেশ হিন্দু-বৃদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দাস জানান, উপজেলার ৭৯টি মন্দিরে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপজেলায় কোনো মন্দিরে অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দশমী পূজা শেষে উপজেলার শিবালয় যমুনা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন। আবার কিছু কিছু মন্দির কমিটির লোকজন মন্দিরের কাছের জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেন। চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন বাগেরহাটের চিতলমারীর চরবানিয়ারী ইউনিয়নের চন্ডীভিটার দুর্গোৎসব। চিতলমারীর কৃতীসন্তান, বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব কালাচাঁদ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিমার সমন্বয়ে এ বৃহৎ দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়। পূজা উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ মেলায় পুতুল নাচ, নাগরদোলা, শিশুদের ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাইডে তরুণ-তরুণী ও শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা থাকায় কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয় ৫ দিনব্যাপী এ শারদীয় দুর্গোৎসব।