দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে লংগদুর আটটি বিদ্যালয়
প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
মাত্র দুইজন করে শিক্ষক দিয়েই চলছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার প্রাথমিকের ৮টি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলো হলো- মারিশ্যারচর মুসলিমবস্নক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেটান্যামাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মারিশ্যারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বামে লংগদু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কোনোটিতে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন-সাতজন করে শিক্ষকের পদ থাকলেও বছর কয়েক ধরে দুইজন করে শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। তবে এসব বিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষক অন্য বিদ্যালয়ে প্রেষণে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে এসব বিদ্যালয়ের কোনোটিতে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে শুরু করে সহকারী শিক্ষকের পদগুলো অধিকাংশই শূন্য রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক সংকটে থাকা বিদ্যালয়ের মধ্যে উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের মারিশ্যারচর মুসলিমবস্নক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ পাঁচটি। এখানে শিক্ষক আছেন মাত্র দুইজন। প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। পেটান্যামাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ শিক্ষকের বিপরীতে আছেন মাত্র দুইজন। এখানেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারী মিলে তিনটি পদ খালি। দক্ষিণ মারিশ্যারচর বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক আছেন মাত্র দুইজন। এখানে ছয় শিক্ষকের অনুমোদিত পদের চারটিই খালি। দীর্ঘদিন নেই প্রধান শিক্ষক।
উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক আছেন মাত্র দুইজন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ সাতটি। এই বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯টি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছে ২৬০ জন।
এছাড়াও কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অনুমোদিত ছয়টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। এখানে সহকারী শিক্ষকের চারটি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। এদিকে উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের তিনটি বিদ্যালয়ে মাত্র দুইজন করে শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে বিদ্যালয়গুলো সচল রাখা হয়েছে। এখানে বামে লংগদু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ছয়টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন শিক্ষক। একই অবস্থা এপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এখানেও প্রধান শিক্ষকসহ ছয়জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন সহকারী শিক্ষক। একই সঙ্গে রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ছয়টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন সহকারী শিক্ষক। এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন। উপজেলা সদর থেকে অদূরে এপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়টিতে পার্শ্ববর্তী ৪টি এলাকার প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর হোসেন বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরেই প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বাকি চারজন সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য। কর্মরত একজন সহকারী শিক্ষক আমি ও অন্যজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।'
চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, এ বিদ্যালয়ে ক্যাসমেন্ট এরিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। দুইজন শিক্ষকের পক্ষে সব শিক্ষার্থীকে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমকে ইমাম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া এবং সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির ধীরগতির কারণে এখানে শিক্ষকের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা অফিসেও জনবল সংকট রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন হলো বিদ্যালয়গুলোতে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। ফলে লংগদু উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় একধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে স্থগিত থাকা শিক্ষক নিয়োগটি সম্পন্ন হলে এই সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।