কলাপাতা এবং সুপারি গাছের পাতা দিয়ে বিলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর। এই ঝুপড়ি ঘরের ভেতরে অবস্থান করছে শিকারিরা। আর বাঁশের কাঠিতে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি পালিত বক। ছাউনির ভেতরে অবস্থানকারী শিকারিরা কাঠিতে বাঁধা বকগুলোকে মাঝে মধ্যে নাড়া দেন। এতে কাঠিতে বাধা বকের উড়ন্ত ডানা দেখে খাবারের সন্ধানে বিলে আসা বকগুলো ছাউনির ওপরে বসে। আর বসামাত্রই ঝুপড়ির ভেতরে থাকা শিকারিরা সুযোগ বোঝে খপ করে ধরে ফেলছেন। এভাবে প্রতিনিয়ত ফাঁদ পেতে বক ধরছেন শিকারিরা।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কোমা বিলে এমন চিত্র দেখা গেছে। এখানে বক ধরার জন্য পাঁচটি ফাঁদ পাতা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- উপজেলার হোগলা, ঘাগড়া, জারিয়া, ধলামুলগাঁওসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এভাবে অবাধে বক শিকার করা হচ্ছে।
কোমা বিলের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, বিলের পানি কমতে থাকায় মাছ খাওয়ার আশায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে আসে। তবে একসময় এই বিলে প্রচুর বক দেখা গেলেও এখন পরিমাণে তা খুব কম। এখানের শিকারীরা প্রতিদিন খুব সকালে ও বিকালে বক শিকার করে থাকেন। ধৃত বক স্থানীয় বাজারে তারা ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে প্রকাশ্যে বিক্রি করেন।
অথচ বন্যপ্রাণী আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। তা ছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
পুর্বধলা পরিবেশ আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সুজন জানান, ইতোপুর্বে পূর্বধলা উপজেলাকে পাখি নিধনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করেছিল উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এরপরেও এখানে অবাধে পাখি নিধন করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক অবহিত করে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এসব বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
পূর্বধলা সরকারি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক শাহজাহান কবীর খান বলেন, বক ও অন্যান্য প্রজাতির পাখি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই অবাধে পাখি নিধন বন্ধ করতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার, বিশিষ্ট পাখিপ্রেমী ব্যক্তিত্ব আনসার উদ্দিন খান পাঠান বলেন, পাখির সঙ্গে আমাদের প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য জড়িয়ে আছে। এভাবে পাখি ধরা মোটেও কাম্য নয়। পাখি ধরা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ইউএনও খবিরুল আহসান জানান, পাখি ধরা দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।