বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

নড়াইলে চার দশক ধরে মসজিদ মন্দির পাশাপাশি

নড়াইল প্রতিনিধি
  ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নড়াইলের মহিষখোলা এলাকায় একই আঙিনায় গড়ে তোলা জামে মসজিদ ও মহিষখোলা সার্বজনীয় পূজা মন্দির -যাযাদি

একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির। প্রায় চার দশক ধরে মিলেমিশে চলছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ইবাদত আর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনা। সময়মতো হচ্ছে আজান ও নামাজ, নিয়ম করে চলে পূজা-অর্চনাও। সময় হলে কেউ যাচ্ছেন নামাজে, আর কেউ যাচ্ছেন দেবী দর্শনে। এক পাশে চলছে জিকির অন্য পাশে উলুধ্বনি। এক পাশে আতরের সুঘ্রাণ অন্য পাশে ধূপকাঠি।

এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছে পৃথক দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়। ধর্মীয় সপ্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকার মহিষখোলা পুরনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ ও মহিষখোলা সর্বজনীয় পূজা মন্দির এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় নড়াইলের পুরান সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়টি মহিষখোলায় ছিল। সেই কার্যালয়ের পাশেই ১৯৭৪ সালে মহিষখোলা পুরনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নামে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে নতুন করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সর্বজনীয় পূজামন্দির। নিজস্ব জায়গায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সরোজমিন দেখা যায়, চিত্র নদীর পাড়ে একটি ছোট্ট মাঠের মধ্যে তিনটি স্থাপনা রয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদ, আর উত্তর পাশে রয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী। মন্দির থেকে একটু সামনে এগোলেই রয়েছে শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতাল। আর মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি রাস্তা।

ওই এলাকার কয়েকজন স্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে আমরা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকায় বসবাস করে আসছি। আমাদের এলাকায় কখনো ধর্ম নিয়ে কোনো বিরোধ হয়নি। এলাকার মানুষ মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেকেই নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।'

মহিষখোলা সর্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভংকর সরকার ট্রম্নপাল বলেন, 'এই এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি হলেও কখনোই আমাদের পূজা-অর্চনা করতে সমস্যা হয়নি। আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি।'

মহিষখোলা পুরনো সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদ কমিটির সদস্যরা বলেন, 'মসজিদ কমিটি মন্দির কমিটিকে নামাজের সময়সূচি দিয়েছি। নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কাজক্রম সীমিত রাখেন। নামাজ শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-অর্চনার কাজ চলে। এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত নেই।'

মহিষখোলা পুরনো সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদের ইমাম ইনামুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের মন্দির এবং মসজিদ পাশাপাশি। আমাদের এখানে কোন সমস্যা ইতোপূর্বে হয়নি। আগামীতেও ইনশাআলস্নাহ হবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে