খালের ওপর ধীরগতিতে চলছে লোহার সেতুর নির্মাণকাজ। মাসের পর মাস গেলেও কচ্ছপগতির কারণে কাজ এগোচ্ছে না। মানুষের পারাপারের ভোগান্তিও কমছে না। বিকল্প যাতায়াতের পথ নেই। তাই নির্মাণাধীন সেতুর লোহার কাঠামোর ওপরই বাঁশ বেঁধে বানানো হয়েছে সাঁকো! এই সাঁকো দিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি জেনেও পারাপার হয় বহু নারী-পরুষ-শিশু।
দুর্ভোগের এই চিত্র পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাদারবুনিয়া ও রসুলবাড়িয়া গ্রামের দু'পাড়ের মানুষের। গ্রামবাসী জানান, গ্রাম দু'টির মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মাদারবুনিয়া নামের একটি খাল। এই খাল বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে দুই গ্রামকে। খালের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত রসুলবাড়িয়া গ্রামের সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু পূর্বপাড়ের মাদারবুনিয়া গ্রামটি খালের কারণে সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন।
একসময় পাশাপাশি মাদারবুনিয়া-রসুলবাড়িয়া গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ছিল রশি টেনে পারাপার হওয়া খেয়া নৌকার মাধ্যমে। সেই খেয়ায় পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। পরে কাঠের সেতু বানিয়ে লোকজন কোনমতে পারাপার হলেও যানবাহন চলার সুযোগ ছিল না। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিতে দুই বছর আগে লোহার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। কিন্তু শুরু থেকেই কাজে গতি নেই। সেতুর অর্ধেক কাজ করে বাকি কাজ পড়ে আছে মাসের পর মাস। তাই পারাপারের জন্য দুই সপ্তাহ আগে এই বাঁশের সাঁকো বানিয়েছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, দুই বছর আগে সদর ইউনিয়নের মাদারবুনিয়া ও রসুলবাড়িয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা মাদারবুনিয়া খালের ওপর লোহার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ে কাজটি পায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট প্রস্থের এই সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১ এপ্রিল। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি, বরং চলছে ধীরগতিতে। এক বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুই বছরেও হয়নি। দীর্ঘদিন খালে শুধু লোহার খুঁটি পুঁতে কাজ ফেলে রাখা হয়েছিল। মাস ছয়েক আগে বসানো হয়েছে লোহার অ্যাংগেল। এখনো আরও অ্যাংগেল বসানো, রড বাঁধাই করা, কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া এবং সংযোগ সড়কের কাজ বাকি পড়ে আছে। এলজিইডির তথ্যানুযায়ী ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা। পরে আরও চার মাস মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি।
উপজেলার রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেন জানায়, 'বুক কাঁপে এই সাঁকো পার হতে। কখন যে পা পিছলে পড়ে যাই- সেই ভয়ে থাকি। কোনরকম পড়ে লোহার অ্যাংগেলে বাজলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। আমরা চাই, সেতুর কাজ যত দ্রম্নত সম্ভব শেষ করা হোক।'
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, 'যখন রশি টেনে নৌকায় শিক্ষার্থীরা পারাপার হতো তখনো কষ্ট ছিল। এখন বাঁশের সাঁকোতে পারাপারে হতে সেই কষ্ট আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাঁকো পারাপার হতে হয়। সেতু নির্মাণের কাজ ধীরগতির কারণে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের মাত্রা এখন বেড়েছে। এখন নেই কাঠের সেতু, নেই খেয়া নৌকাও। যাতায়াতের কোনো বিকল্প পথ না থাকায় সপ্তাহ দুইয়েক আগে লোহার সেতুর ওপর-ই বাঁশের সাঁকো বানিয়েছেন এলাকার কয়েক যুবক। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। মাদারবুনিয়া অংশের কিছু শিশু শিক্ষার্থী সাঁকো পারাপারে ঝুঁকি হওয়ায় ক্লাসে ঠিকমতো আসছেও না। তাই দ্রম্নত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি আমাদের।'
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, 'সেতুটির লোহার অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শিগগিরই শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, শিগগরই সেতু নির্মাণকাজ শেষ হবে।'