বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জমে উঠেছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা মন্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
পাবনা প্রতিনিধি জানান, নারীতে 'পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন'-এই বিশ্বাস নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমী তিথিতে কুমারী রূপে দেবী দুর্গার বন্দনার মাধ্যমে পাবনার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে শুরু হয় পূজার আয়োজন। দ্বিতীয় বারের মতো এ মিশনে এবার কুমারী দেবীর আসনে ছিল ছয় বছর বয়সি শ্রেয়া তলাপাত্র, তার শাস্ত্রীয় নাম হয়েছে উমা।
পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গহনা, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রোচ্চারণ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করেন পূজারিরা। আর এই পূর্জা দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। পূজা চলাকালে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সভাপতি অসিত কুমার সাহা, সহসভাপতি উত্তম কুন্ডু, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত কুমার ঘোষ, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক অলক পালসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য। রোববার বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে উপজেলার হাজীর হাট ইউনিয়নে অবস্থিত প্রধান পূজামন্ডপ এআর পলস্নীতে শ্রী শ্রী মহাপ্রভু সেবাশ্রম সর্বজনিন দুর্গাপূজা মন্দিরে প্রধান পুরোহিতের পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শুরু হয়। এ ছাড়াও একইসঙ্গে উপজেলার ১১ মন্ডপে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মন্ডপগুলোতে আগের মতো আলোকসজ্জা না থাকলেও ধূপের ধোঁয়া, ঢাকের বাদ্য, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
মহাষষ্ঠীতে অশুভ শক্তির বিনাশে মঙ্গলময় দেবীর জাগরনে সুর প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা করেন ভক্তরা। আশরিক শক্তিকে পৃথিবী থেকে দূর করতে সেরশ প্রচারে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেবী দুর্গাভক্তদের পাপ থেকে মুক্তি দিয়ে পৃথিবী থেকে অশুভ শক্তির বিনাসের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করবেন বলে আশাবাদী ভক্তরা।
মহাষষ্ঠী পূজা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নীল রতন দাস, সাধারণ সম্পাদক অনুপম দাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন চন্দ্র বণিক।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে ইউএনও পাঠান মো. সাইদুজ্জামানের উদ্যোগে একাধিকবার পূজা উদযাপনে প্রস্ততি সভা, আইনশৃঙ্খলা সভা এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিয় সভা করা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি ও তদারকি করা হচ্ছে।
দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির বাছাইছড়ি সাজেক ইউনিয়নের দুটি ও বঙ্গলতলী একটি পূজা মন্ডপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে। উৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পূজা মন্ডপগুলোতে বসেছে ছোট-বড় মেলার আসর। বৃহস্পতিবার বিকালে সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট এলাকায় দুর্গাপূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন শেষে আর্থিক অনুদান ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে চলমান দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল খাইরুল আমিন। সেনাবাহিনীর আর্থিক ও নিরাপত্তাজনিত সহায়তা পেয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্যদিয়ে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজাকে উৎসবমুখর করতে মন্ডপে মন্ডপে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুজন আহমেদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ দায়িত্ব পালনের কথা নিশ্চিত করেছেন। পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়ামিন খানের সার্বিক দিকনির্দেশনায় জেলা ওয়ারী দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।