অস্থির সবজির বাজার, দিশেহারা মানুষ
প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
জামালপুর ইসলামপুরে বিভিন্ন বাজারে সবজি বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। একসময়ে এ অঞ্চলের বসবাসকারীরা শহরের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে সব ধরনের সবজি কিনতেন। কিন্তু সাম্প্র্রতিক সময়ে কারণে ছন্দপতন ঘটেছে। এখন শহর আর গ্রামের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম প্রায় একই। গত কয়েক দিনে টানা বর্ষণে শহর ও চরাঞ্চলের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে ইসলামপুর বাজার ও বঙ্গবন্ধু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু ছাড়া সব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যেমন- ২০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ এখন ৩৫০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির বেগুন ১০০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির করলস্না ৮০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির মুখীকচু ৬৫ টাকা, ৫০ টাকা কেজির কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির ঝিংগা ৭০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির বরবটি ৮০ টাকা, ৪০ টাকা কেজি কদর ৭০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির পটল ৮০ টাকা, ৫০ টাকা পিচের জাতি লাউ ১০০-১২০ টাকা, ১০ টাকা আঁটির লাল-মুলা শাক ২০ টাকা, সবচেয়ে আকাশচুম্বী দাম ধনেপাতা তিনটা লতা ১০ টাকা। আর এভাবে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। মুরগির খামারি সুবাহান মিয়া বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে মুরগির খামারি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ইসলামপুর পৌরবাজারে সবজি কিনতে আসা পৌর এলাকার অটোভ্যান চালক কুদ্দুস আলী মন্ডল (৪৫) জানান, সারা দিনে অটোভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তা পরিবারের ছয় সদস্যের সবজি কিনতে গেলে পকেট যেন শূন্য হয়ে যায়।
এ অবস্থা শুধু অটোভ্যানচালক কুদ্দুস আলী মন্ডলের নয় এলাকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরও একই অবস্থা বলে জানান বাজার করতে আসা পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মী বিউটি আক্তার (৩৮)। তিনিও সবজির বর্তমান দামকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। তিনি জানান, 'যা বেতন পাই তা দিয়ে সবজি কেনা, ওষুধ, বিদু্যৎ বিল, ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ দিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না।'
গুঠাইল বাজারে সবজি কিনতে আসা চরমন্নিয়া এলাকার মনিরুল ইসলাম মনির ও কৃষক সোহেল মিয়া জানান, 'কয়েকদিন আগেও প্রায় সব ধরনের সবজির দাম মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু শীতের সবজির ভরা মৌসুমে এখন আবারও দাম চড়া। দামের ঠেলায় আমরা সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছি।'
অবশ্য কাঁচা সবজি বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম জানান, ইসলামপুর বাজারে বেশির ভাগ তরকারি গোয়ালেরচর, চরপুটিমারি, মহলগিরী, হারিয়াবাড়ি, চরদাদনা এলাকার পাইকারি দরের হাট-বাজার থেকে আসে। আর সে সব বাজারেও পাইকারি দরের তরকারির দাম হঠাৎ করেই কেজিতে গড়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
অপরদিকে ধর্মকুড়া এলাকার সবজি বিক্রেতা জালাল হোসেন জানান, নাপিতেরচর, ঝগড়ারচর, বকশিগঞ্জ এলাকা থেকে ইসলামপুরের পাইকারি সবজি ক্রেতারা সবজি কেনেন। আর এসব মোকামেই সবজির দাম চড়া। তাই সবজি ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে চড়া দামেই বিক্রি করবেন এটাই স্বাভাবিক।
ইসলামপুর ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, ইসলামপুর বাজারগুলোর আড়তে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সদর বাজারসহ অন্যান্য হাটবাজারে অসহনীয় পর্যায়ে সবজির দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সব শ্রেণির মানুষই যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে দুটি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজি বিক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচ ৪০০, বেগুন ১২০, দেড়শ' থেকে ১২০, করলস্না ১২০, পটল ১০০, মুলা ১০০, ফুলকপি ১০০, পাতাকপি ৮০, শসা ৮০, কচুর মুখি ৮০, পেঁপে ৬০, ধুন্দল ৬০, ঝিংগা ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৭০ ও আলু ৬০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া প্রতি আঁটি লালশাক ২০-৩০, ডাটা ৪০ ও প্রতি হালি কাঁচকলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাত্র এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে সবজির দাম ডাবল হয়েছে। অভিযোগ আছে, সবজি চাষিদের কাছ থেকে স্বাভাবিক দামে পাইকারি সবজি কিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো ক্রেতাদের কাছ থেকে খুচরা দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে একাধিক সবজি বিক্রেতার দাবি, বন্যায় সারাদেশে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই সবজি সংকট সৃষ্টি হওয়ায় হু হু করে দাম বাড়ছে।
সবজি কিনতে আসা দিনমজুর হাফেজ মোল্যা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ গরিব। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কৃষিকাজ ও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। একজন দিনমজুর ও একজন ভ্যানচালক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করে। আর বৃষ্টি-বাদল থাকলে ঘরে বসে থেকে দেনা হয়ে সংসার চালাতে হয়। আবার অনেককে না খেয়েও থাকতে হয়। বর্তমানে তো বৃষ্টি নামছে পুরোদমে। এখন বেশিরভাগ গরিব বেকার। এমন অবস্থায় বাজারে যদি অস্বাভাবিকভাবে চাল-ডাল, তেল ও সবজির দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে বাঁচব।'
সালথা ইউএনও আনিছুর রহমান বালী বলেন, 'আমরা সবজি বাজার মনিটরিং করছি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই এক দিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে।'