শেরপুরের বন্যা

কৃষি খাতেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের পাঁচ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেলস্নাখালীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ার পর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে শুরু করেছে। বন্যায় ক্ষেতের ফসল ডুবে নষ্ট হওয়া কৃষক পরিবারগুলো দিশেহারা। অনেক স্থান এখনো জলাবদ্ধ থাকায় পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা যাচ্ছে না। তবে এই বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'এবারের বন্যায় শেরপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টরই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৫৯ হেক্টর জমির শাকসবজি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ দশমিক ৭ হেক্টর জমির বস্তায় আদা চাষ আক্রান্ত হয়েছে।' ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখনো অনেক জায়গায় বন্যার পানি আছে। যার কারণে ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি নেমে গেলেই বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' কৃষকরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েননি তারা। তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। এখনই পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে তাদের পথে বসতে হবে। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, 'এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। বন্যায় সব ভেসে গেছে। ক্ষেতের একটা ধানও তুলতে পারব না। ধার-কর্য করে আবাদ করেছিলাম, সামনে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।' ঝিনাইগাতী উপজেলার কুশাইকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেকের প্রায় সাত একর এবং আব্দুল মালেকের চার একর জমি ধানসহ ঢলের পানিতে আসা বালুতে ঢেকে নষ্ট হয়ে গেছে। একই অবস্থা দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়ারও। তিনি বলেন, '৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেখি নাই। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। বন্যার কারণে এখন আমি সর্বস্বান্ত।' শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার কৃষক ফরিদ বলেন, 'আগাম সবজির আবাদ করছিলাম। প্রায় লাখখানেক টাকা খরচ করেও ক্ষেতের সবজি থেকে এক টাকাও আয় হলো না।' এদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং নাকগাঁও পয়েন্টে ৪২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেলস্নাখালী নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার ৫১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উজান থেকে ঢলের পানি নেমে গেলেও ভাটি এলাকায় নিম্নাঞ্চলে অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ কাটেনি। অনেক এলাকায় দিগন্তজুড়ে ফসলের মাঠ এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই বন্যায় জেলার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ রাস্তা ভেঙে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত হয়ে গেছে। আবার কোথাও রাস্তায় পানি থাকায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বৃহস্পতিবার সকালে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, 'বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হলেও সেখানের পানিও কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চলমান রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বলা হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার পর পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।'