স্বপ্ন পূরণ হলো না ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হাসানের
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর প্রতিনিধি
গত ১৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে আহত হন মো. হাসান সিকদার। চোখে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গত ১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হাসান চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলি গ্রামের সিকদার বাড়ির কবির হোসেনের ছেলে। তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে পরিবারের অভাব ঘোচাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে পড়ালেখা ও সংসারের খরচ জোগাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি লাইব্রেরিতে কাজ নেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই গুলিতে চিরবিদায় নিতে হয় এ যুবককে।
সম্প্রতি হাসানদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায়, হাসানের বাবা কবির হোসেন একজন শ্রমিক। তবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন কর্মহীন। হাসানের মা হালিমা বেগম গৃহিণী। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট এক বোন কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট বোন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য হয়ে হাসান ঢাকায় কাজে যোগ দেন। শিক্ষিত হয়ে সংসারের হাল ধরবেন এবং বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন হাসান। কিন্তু তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলিতে তার মৃতু্য হয়।
হাসানের ছোট বোন লিমা বলেন, 'সর্বশেষ ১৭ তারিখে আমার সঙ্গে কথা হয়। রাতে মায়ের সঙ্গেও কথা হয় ভাইয়ের। পর দিন ১৮ জুলাই সকালে আমি মোবাইলে ম্যাসেজ দেই। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। ওইদিনই বেলা ১১টার দিকে ভাই লাইব্রেরি থেকে বের হলে গুলিবিদ্ধ হয়।'
হাসানের মা হালিমা বেগম ছেলের মৃতু্যর নির্মম অবস্থার কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। আন্দোলনের কারণে কাঁচপুর ব্রিজের পরে আর যেতে পারিনি। তার পর হেঁটে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে আইসিইউতে। চিকিৎসকরা বলছিলেন ৭২ ঘণ্টা দেখবেন। প্রথমে তার মাথায় এবং পরে চোখে অপারেশন করবেন। কিন্তু তার আগেই ১৮ জুলাই রাতে ছেলের মৃতু্য হয়। পরে বাড়িতে এনে তার দাফন করা হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার ছেলে অনেক স্বপ্নের কথা বলেছে। টাকা রোজগার হলে তোমাদের আর কষ্ট থাকবে না। বোনদের বিয়ে দিতে পারব। বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। আমাদের ঘর হবে। সেসব স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল।'
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহসীন উদ্দিন বলেন, 'ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য সরকারি যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেসব নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করছি। আমি নিজে এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও'রা খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং সহায়তা করছেন।'