সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। অভিযানে ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ছয় জেলা থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয়েছে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য। সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও বরিশালের হিজলা থেকে এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
সিলেট অফিস জানিয়েছে, সিলেটে পৃথক অভিযান চালিয়ে ওয়ার্ড ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং এক ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। গত বুধবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- সিলেট মহানগরীর ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও আম্বরখানা বনশ্রী আবাসিক এলাকার মৃত আবদুল লতিফ শেখের ছেলে শহীদ শেখ (২৮), ১৬নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি ও চারাদিঘীরপাড়ের আবদুল লতিফের ছেলে আজিজুল হাকিম রাজু (২৮) এবং বুলেট মামুনের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ও বালুচর আবাসিক এলাকার লুকমান মিয়ার ছেলে আবদুলস্নাহ (২৪)।
র্
যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মশিহুর রহমান সোহেল জানান, বুধবার সন্ধ্যায় জেলরোড এলাকা থেকে শহীদ শেখকে, নয়াসড়ক এলাকা থেকে আজিজুল হাকিম রাজুকে ও উত্তর বালুচর থেকে আবদুলস্নাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রসহ ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। জব্দ করা হয়েছে ৫০৪ পিস ইয়াবা, ৫২৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭৪৫ বোতল স্কাফ সিরাপ, ৬০০ গ্রাম গাঁজা, ২৩টি দেশীয় অস্ত্র (কুড়াল, চাপাতি, রাম দা, ছুরি, হাতুর), ২টি ল্যাপটপ, ৪টি ট্যাব, ১৮টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, ২৩টি বাটন মোবাইল, ৬টি পাসপোর্ট, ১টি মোটর সাইকেল, নগদ ৩ লাখ ৪ হাজার ৭শ' টাকা, ২২৯০ ইন্ডিয়ান রুপি, ৩০ কাতার রিয়াল।
গত বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোর্কনঘাট ও বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভূঁইয়া বাড়িতে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ- (৩৮), রুবি আলমগীর-(৩৩), সামি ভূঁইয়া- (১৬), সিয়াম ভূঁইয়া-(১৪) ও সানি ভূইয়া- (২৪)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী পৌর এলাকার গোর্কণঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদকে আটক করে। পরে তার কাছ থেকে ৩টি দেশীয় অস্ত্র, ৫০৪ পিস ইয়াবা, ১টি খোড়, ২টি ল্যাপটপ, ৪টি ট্যাব, ১৭টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, ২২টি বাটন মোবাইল, ৪টি পাসপোর্ট ও নগদ ২ লাখ ৫ হাজার ৬শ' টাকা জব্দ করা হয়।
এদিকে বুধবার গভীর রাতে যৌথবাহিনী বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভূঁইয়া বাড়িতে (ভূঁইয়া ফার্ম হাউস) অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী রুবি আলমগীর, তার ছেলে সামি ভূঁইয়া, সিয়াম ভূঁইয়া ও সানি ভূইয়াকে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে ২০টি দেশীয় অস্ত্র (কুড়াল, চাপাতি, রামদা, ছুরি, হাতুরি), ৫২৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭৪৫ বোতল স্কাফ সিরাপ, ৬০০ গ্রাম গাঁজা, নগদ ৯৯ হাজার ১শ' টাকা, ২ হাজার ২৯০ ইন্ডিয়ান রুপি, ৩০ কাতার রিয়াল, পাসপোর্ট, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, বাটন মোবাইল ও মোটর সাইকেল জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার একজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ও ৪ জনকে বিজয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, দুই দিনের অভিযানে নীলফামারীতে ৮ কেজি গাঁজাসহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানিক দল।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের বেঙ্গমারী কামারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন কেজি গাঁজাসহ মন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাঁজাসহ মজিবর রহমান গ্রেপ্তার হন।
এ ঘটনায় নীলফামারী থানায় পৃথক দুইটি মামলা করে গ্রেপ্তারদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দপ্তরের উপ-পরিদর্শক এনামুল হক জানান, উদ্ধার হওয়া গাঁজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ সাহারুল (৩৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গত বুধবার রাতে দর্শনা পৌর এলাকার মোবারক পাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। সাহারুল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার মোবারক পাড়ার পিয়ার আলীর ছেলে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামি ও পিস্তলের তথ্য পায় চুয়াডাঙ্গার সেনাবাহিনী ক্যাম্প। ওই সংবাদের ভিত্তিতে দর্শনা পৌর এলাকার মোবারক পাড়ায় আসামির বাড়িতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর একটি দল। এ সময় আসামিকে গ্রেপ্তার করে তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাড়ির পেছনে পুঁতে রাখা অবস্থায় একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি মোবাইল জব্দ করে।
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাটসহ সহিংসতা কর্মকান্ডে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তি চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে জানিয়েছেন থানার ওসি।
জানা যায়, সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ বুধবার গভীর রাতে বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থেকে ইব্রাহিম খলিলকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ও পলাতক আসামি গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে অস্ত্র-গুলি লুট, অগ্নি সংযোগ, গুলিবর্ষণ, পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও আহত করার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যে বুধবার গভীর রাতে পৌরসভা ৩ নং ওয়ার্ডস্থ পাপুয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ইব্রাহিম খলিল ৫ নং ওয়ার্ড, সোনাইমুড়ী পৌরসভা, থানা- সোনাইমুড়ী, জেলার নোয়াখালীর বাসিন্দা।
হিজলা (বরশিাল) প্রতিনিধি জানান, বরিশালের হিজলা উপজেলার একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী কাজলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার সন্ধ্যায় কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাজল বরজালিয়া ইউনিয়নের সিদ্দিক রাড়ীর ছেলে। হিজলা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।