বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

শতবর্ষী কৃষক আব্দুল গফুরের মাল্টা চাষ!

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নিজ হাতে গড়ে তোলা মাল্টা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত শতবর্ষী কৃষক আব্দুল গফুর -যাযাদি

কৃষক মো. আব্দুল গফুর। বয়স ১০০ ছুঁই ছুঁই। বাড়ির পাশেই তার ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছেন মাল্টা। লাঠিতে ভর করে নিজেই পরিচর্যাসহ বাজারেও বিক্রি করে থাকেন। বয়স হলেও নিজেকে বৃদ্ধ মনে করেন না তিনি। সব কাজ চলে এভাবেই। বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে এমন চিত্র।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের শিরবির গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের বাবা তিনি। বড় ছেলে সিলেটে চাকরি করেন আর ছোট ছেলে দোকানি। দুই মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন।

২০২১ সালে কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে ভিয়েতনামি ও পয়সা জাতের মাল্টার গাছ লাগিয়েছিলেন আব্দুল গফুর। কৃষি অফিস থেকে চারা ও সার্বিক সহযোগিতা করলেও জমি প্রস্তুত সব ধরনের কাজ নিজেই করেছেন। চাষের তিন বছরে ফলন পেয়েছেন দুইবার। এসব মাল্টা গাছ থেকে তুলে নিজেই পার্শ্ববর্তী কাপাসকাটিয়া বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

আব্দুল গফুর বলেন, 'আমার বয়স ৯৯ পার হয়ে গেছে। সামনের বৈশাখে ১০০ হইয়া যাইবো। আমি এই বাগান করে মোটামুটি ভালাই মাল্টা বেঁচেছি। নিজের কাজ নিজেই করতে ভালাই লাগে। এই যে মাল্টা হইছে, বাজারেও বেচেছি, আবার পাড়াপ্রতিবেশীর মানুষ আইলে ১০-১২ কইরা দিয়া দেই। বাজারে নিয়ে গেলে ১০০ টাহা কেজি বেচি। আমার কথায় আরও মানুষ এই মাল্টার বাগান করেছে।'

আব্দুল গফুরের মাল্টার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের বেশির ভাগ মাল্টা বিক্রি করে ফেলেছেন তিনি। তবে তার বাগানের মাল্টা আকারে যেমন বড় তেমন দেখতেও আকর্ষণীয়। দেখে বোঝা গেল, বাগানের অনেক বেশি যত্ন নিয়েছেন তিনি। সেখানে কথা হয় দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ১০০ বছর বয়সি চাষি দুর্গাপুরে একজনই রয়েছেন মনে হয়, তিনি আব্দুল গফুর। কৃষি কাজে তার অনেক বেশি আগ্রহ। এই বয়সে চলাফেরা করাই যেখানে কঠিন, সেখানে তিনি নিজেই সব কাজ করে আনন্দ পান। তিনি বলেন, প্রথম বছর তাকে ফল রাখতে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় বছর থেকে ফল বিক্রি করতে পেরেছেন। স্থানীয় বাজারেই মাল্টা বিক্রি করলেও তুলনামূলক দাম কম পাচ্ছেন। তার কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাল্টায় মিষ্টতা আসার আগেই জুন-জুলাই মাসে বিক্রি শুরু করে দেন। তাতে মাল্টার বাজার নষ্ট হয়। কারণ সেসময় মাল্টায় মিষ্টতা আসে না। টক লাগে। তাতে দেখা যায় পরবর্তীতে ভালো রসালো মাল্টাগুলোও কেউ কিনতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর আগেও ১৫০-২০০ টাকা কেজি পাইকারি কিনতে হতো। সে জায়গায় বর্তমানে আব্দুল গফুরের সুস্বাদু মিষ্টি মাল্টা স্থানীয় বাজারে খুচরা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মাল্টা বাজারজাত করলে রসালো হবে এবং ভালো দামও মিলবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বারি-১, ভিয়েতনামি ও পয়সা জাতের রসালো ফল মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন দুর্গাপুর উপজেলার চাষিরা। এ বছর দুর্গাপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই মাল্টার চাষ বাড়ছে। প্রায় ৩০০ জন চাষি ছোট-বড় বাগানে মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে