নদীভাঙনে বিলীনের শঙ্কা, তবুও নির্মাণ হচ্ছে মুজিবকিলস্না
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপৎকালীন সময়ে মানুষ ও গবাদি পশু-পাখির আশ্রয়স্থলের জন্য কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নির্মাণ করা হচ্ছে মুজিবকিলস্না। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর থেকে আনুমানিক আড়াইশ' মিটার দূরত্বে হওয়ায় শুরু থেকেই নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল প্রকল্পটি। তারপরও ওই স্থানেই মুজিবকিলস্নার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে প্রকল্প এলাকা কড়াই বরিশালে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রকল্প কাজ শেষের আগেই নদে বিলীনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
চিলমারী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গওছল হক মন্ডল বলেন, 'মুজিবকিলস্নাটি নির্মাণ করার জন্য জায়গা নির্বাচনে ভুল ছিল। কারণ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এত বড় একটি প্রকল্পের কাজ করবে, অথচ সঠিকভাবে বিচার বিবেচনা করবে না, সেটি হতে পারে না। তবে এটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের অনেক উপকার হতো।'
তিনি আরও জানান, 'প্রথমে মুজিবকিলস্নার জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল উত্তর শাখাহাতির মধ্যবর্তী স্থানে। কিন্তু নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম প্রকল্পটি সরিয়ে নেন কড়াই বরিশালে। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। নদী এলাকা থেকে দূরে নির্মাণ করা হলে ভাঙনের শঙ্কা থাকত না। তবে নদের ভাঙনকবলিত এলাকায় যদি বস্তা ফেলা হয় তাহলে রক্ষা পেতে পারে প্রকল্পটি।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মুজিবকিলস্না প্রকল্পটিতে একটি প্রাণিসম্পদ রাখার শেড ও একটি ৩ তলাবিশিষ্ট শেল্টার ভবন নির্মাণ হবে। সি গ্রেডের এ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। প্রকল্প নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমজেএস এমএনপি জেভি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, যে কোনো দুর্যোগে বিশেষ করে বন্যায় জানমাল রক্ষায় ব্যবহার হবে মুজিবকিলস্না। অন্য সময় মুজিবকিলস্নাগুলো গ্রাম ও ইউনিয়ন কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সম্পাদন করা যাবে। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কমিউনিটি উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈঠক বা সভা করতে পারবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠেয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এটি। সর্বোপরি দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে এই মুজিব কিলস্না।
এদিকে শুরু থেকেই প্রকল্পকে ঘিরে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়েনি। মুজিবকিলস্না নির্মাণে উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন না করা, ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে জমি ভরাট এমনকি ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় তড়িঘরি করে ছাদ ঢালাই দিয়ে বিল উত্তোলনের চেষ্টা যেন অনিয়মের ষোলকলাই পূর্ণ করেছে। এতে স্থানীয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোশারফ হোসেনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ কর্মকর্তার দাবি মুজিবকিলস্নাটি ভাঙনের ঝুঁকিতে নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, নদের তীর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধাকে উপেক্ষা করে বালু উত্তোলনে সহযোগিতা করেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম।
তবে এ ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
মুজিবকিলস্না নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমজেএস এমএনপি জেভির স্বত্বাধিকারী মো. সজিবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মুজিবকিলস্না নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মনোয়ার হোসেন (যুগ্ম সচিব) জানান, 'আমরা আপাতত ওই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছি।'