কুমিলস্নার তিতাসের দুইশ' বছরের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী 'মজিদপুর জমিদার বাড়ি'র মূল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। ধসে পড়া ইট-সুরকি স্থানীয় লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। রোববার উপজেলা প্রশাসন ধসে পড়া অংশ পরিদর্শন করেছে। এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় ভবনের পূর্ব অংশ বিদু্যৎ খুঁটিসহ ধসে পড়ে। এতে এলাকায় বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী জমিরদার বাড়ির মূল ভবনের পূর্বদিকের একটি অংশ ধসে পড়েছে। ধসে পড়া অংশের ইট-সুরকি স্থানীয় লোকজন ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একাধিক নারী জানান, ইটগুলো অনেক পুরনো এবং পাতলা। বিশেষ করে অনেক শক্ত বিধায় এগুলো তাদের বাড়ির আঙিনায় বিছানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।
ভবনের পাশের একজন প্রবাসী বাসিন্দা জানান, 'শনিবার বেলা ১১টায় বাড়ির সামনের অংশটি ধসে পড়ে। বিদু্যতের খুঁটিসহ ধসে পড়ায় এলাকায় এক দিন বিদু্যৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। রোববার দুপুরে খুঁটি বসিয়ে বিদু্যৎ সংযোগ সচল করা হয়েছে। দুদিন টানা বৃষ্টি থাকায় ভবনটি ধসে পড়ে।
জানা গেছে, ইংরেজ আমলের প্রথমদিকে লর্ড কর্নওয়ালিস জায়গীরদারি প্রথাকে বিলুপ্ত করে জমিদারি প্রথা প্রচলন করেন। কিন্তু তৎকালীন মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষভাব থাকায় ইংরেজরা হিন্দু বুদ্ধিমান ও তাবেদার শ্রেণির লোকদের জমিদারি প্রদান করেন। বৃহত্তর দাউদকান্দি মূলত মুসলিম অধু্যষিত এলাকা বিধায় কোনো প্রভাবশালী জমিদার ছিল না। সোনারগাঁয়ের হিন্দু জমিদারদের অধীনেই পরিচালিত হতো দাউদকান্দি পরগণা। তবে তিতাসের মজিদপুরে হিন্দু জমিদার বাড়ির নিদর্শন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। মোট ১৭টি অট্টালিকার মধ্যে ৪টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। জমিদার বাড়ির আশপাশে একটি দীঘি এবং ছোট বড় মিলে ২০টি পুকুর রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন জমিদারদের প্রাসাদসম অট্টালিকা মুসলমানদের দখলে রয়েছে। বর্তমানে তাদের কোনো উত্তরাধিকারীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান সৃষ্টির পরই হিন্দু জমিদাররা ভারতে চলে যান। বর্তমানে সবগুলো ভবনই জরাজীর্ণ। তবে ভবনগুলো বেশ কারুকার্য খচিত এবং বিভিন্ন খুপরির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনগুলোর মধ্যে সুড়ঙ্গ পথও রয়েছে।
মজিদপুর ইউপি সদস্য মো. ইয়াছিন জানান, এই জমিদার বাড়িটি প্রায় দুইশ' বছরের পুরনো। অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মূল ভবনের সামনের অংশটি দুদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে শনিবার ধসে পড়ে। প্রশাসনের নির্দেশে আমি একটি প্রতিবেদন তৈরি করছি, যা ইউএনওর কাছে জমা দেওয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর-রহমান জানান, ইউএনওর নির্দেশে রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বাড়িটি অনেক পুরনো, তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে অন্তর্ভুক্ত নয়। ইউএনও সুমাইয়া মমিন জানান, 'জমিদার বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিতে আগে কোনো প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে কি না সেটি খোঁজ নিচ্ছি। যদি না দেওয়া হয় তাহলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।'