বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১
শারদীয় দুর্গাপূজা

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু

স্বদেশ ডেস্ক
  ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সারাদেশে শাররদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে পূজামন্ডপগুলো। এছাড়া পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর টহল থাকবে সার্বক্ষণিক। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সম্ভাব্য ১০টি হুমকি বিবেচনায় নিয়ে হবিগঞ্জে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা কাঠামোতে জেলার ৯ উপজেলাকে দু'টি সার্কেলে ভাগ করেছে পুলিশ। আনসার-ভিডিপি ও পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবার জেলায় ৯ উপজেলার ৬৩৬টি পূজামন্ডপ ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত। এর মধ্যে ১৪১টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১৯৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও বাকী ৩০১টি পূজামন্ডপ সাধারণ।

নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত চার হাজার ৯৮ জন আনসার-ভিডিপি সদস্যের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে আটজন এবং গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মন্ডপগুলোতে ছয়জন করে নিয়োজিত থাকবেন।

গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি সূত্র যায়যায়দিনকে এ তথ্য জানিয়েছে। পূজা উপলক্ষে তারা জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাটকে একটি সার্কেল এবং অন্য সাত উপজেলা মিলে আরেকটি সার্কেল করেছে।

সূত্রটি জানায়, হবিগঞ্জ পৌরসভার পূজামন্ডপগুলোতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি সদস্যরা সার্বক্ষণিক থাকবেন। বাকী উপজেলাগুলোতে শুধু আনসার-ভিডিপি সদস্যরা সার্বক্ষণিক থাকবেন। তবে একজন পরিদর্শক ও দুইজন করে কনস্টেবলের সমন্বয়ে অনেকগুলো দল যানবাহনে করে পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ উৎসবকে সামনে রেখে ১০টি সম্ভাব্য হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এবারের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

হুমকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিদু্যৎ সরবরাহে ব্যাঘাত; নামাজের সময় মাইকের মাধ্যমে গানবাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের বিরূপ প্রতিক্রিয়া; গোপনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা; ধর্মীয় সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক মতবিরোধ; পূজা কমিটির দ্বন্দ্ব; মসজিদ অথবা মন্দিরে বোমা অথবা ককটেল নিক্ষেপ; নারীদের স্বর্ণের গহনা ছিনতাই বা তাদের উত্ত্যক্ত করা; মদ্যপ, লম্পট, পকেটমার, চোর, ডাকাত ইত্যাদির আনাগোনা বৃদ্ধি; আরতির সময় উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের পূজা দেখার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা।

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর বদলগাছীতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১০২ মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু হয়েছে। সারাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে হিন্দ সম্প্রদায়ের মন্দিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বদলগাছী উপজেলার কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে বেশ সময় ধরে কারিগরা তাদের প্রতিমা তৈরির কাজ করতে পেরেছেন। ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ উৎসবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন নিরাপত্তার কাজে ৬৪০ জন আনছার, ৫০ জন পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়াও যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।

বদলগাছী থানার ওসি মো. শাহজাহান বলেন, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ৫০ জন পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর টহল সবসময় আছে। উপজেলা আনছার ভিডিপি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৬৪০ জন আনছারকে নিরাপত্তার কাজে লাগানো হয়েছে।

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলায় বুধবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয়া দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। বিকালে ষষ্ঠী পুজার মাধ্যমে ৪৯টি মন্ডপে দুর্গাপূজা শুরু হয়। এর আগে উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি শেষে সাজ-সজ্জার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কারিগররা প্রতিমা তৈরি শেষে সুসজ্জিত করেন। প্রতিটি মন্ডপের সামনে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণের মাধ্যমে আলোকসজ্জাসহ অতিরিক্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ডপ সাজাতে ডেকোরেশন ও সাউন্ড সিস্টেম মালিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দুর্গাপূজা ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের থেকে প্রতিটি মন্ডপে ৫০০ কেজি করে মোট ২৪ হাজার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুটি মন্ডপে এক টন করে দুই টন চাল অতিরিক্ত বরাদ্দ এবং আটটি পূজামন্ডপের জন্য সাত হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্চিত চন্দ্র কর জানান, উপজেলায় এ বছর ৪৯টি মন্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

পূর্বধলা থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপুর্ণভাবে উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক মন্ডপে পুলিশ, আনসার, চৌকিদার, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের পাশাপাশি অতিরিক্ত স্ট্রাইকিং পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। অধিক সতর্কতার জন্য প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন থাকবে।

পূর্বধলা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার শহিদুলস্নাহ ভূঁইয়া জানান, কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে জন্য প্রতিটি মন্ডপের আশপাশে সেনাটহল বিদ্যমান থাকবে।

ইউএনও খবিরুল আহসান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতিমধ্যে প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতি সভায় সার্বিক দিক নির্দেশানা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হয়। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া (পাবন) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একটি পৌর এলাকাসহ ছয় ইউনিয়নে পূজামন্ডপে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ১৯টি মন্ডপে পূজা হলেও এবার একটি বেড়ে ২০টিতে পূজা হবে। সদরের ভাঙ্গুড়া বাজারের শ্রী শ্রী কালী মন্দিরে পূজা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীত কুমার পাল বলেন, এ বছর শারদীয় দুর্গাপূজায় দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য প্রার্থনা সঙ্গীত, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বোলন ও আরতী প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য গঠন করা হয়েছে মন্ডপভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল।

পরিষদের সভাপতি মলয় কুমার দেব জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য মন্দিরে মন্দিরে নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। তা ছাড়া ভ্রাম্যমাণ স্টাইকিং ফোর্সও নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছে।

ভাঙ্গুড়া ইউএনও নাজমুন নাহার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য প্রতিটি মন্ডবের সভাপতি-সম্পাদক, পৌর ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে