বদলগাছীর আবাসন প্রকল্প
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঘর জং-মরিচা ধরে নষ্ট
প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পূর্ব বনগ্রামের হাস্তা বিলে ওঠা আবাসন প্রকল্পে পুনর্বাসিত হওয়ার কথা ছিল ২৭০ পরিবারের। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় অল্প সময়েই আবাসনের ঘরগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ টিনের ব্যারাক মরিচা পড়ে ফুটো হয়ে যাচ্ছে। আবার আবাসনের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত কাদার কারণে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। আর এসব রাস্তা ও ব্যারাক সংস্কারে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। যার কারণে সেখানে বসবাসকারী ২৭০ পরিবারের মধ্যে ১৮৫টিই অন্যত্র চলে গেছে। যারা রয়েছেন, তারা বলছেন দ্রম্নত সংস্কার করা না হলে ২-৩ বছরের মধ্যে সব ব্যারাক শূন্য হয়ে যাবে।
জানা যায়, পূর্ব বনগ্রাম আবাসন প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীনদের তালিকা প্রণয়ন করে ২৭০ পরিবারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘর বরাদ্দ দেয়। ২০১২ সালে ওইসব পরিবারকে এই আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়। পরিবারগুলো প্রথম দিকে আনন্দের সঙ্গে ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করলেও ৩-৪ মাসের মধ্যে পুরো ব্যারাকগুলো যেন ফাঁকা হয়ে যায়। তারা বরাদ্দের আবাসন ঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। ওই আবাসন প্রকল্পে মাত্র ৬০-৭০টি পরিবার বসবাস করে। প্রায় ৯ বছর পর আরও ১০-১৫টি পরিবার এই আবাসন প্রকল্পে নতুন করে বসবাস শুরু করে। বর্তমান এখানে মোট ৮৫টি পরিবার বসবাস করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব বনগ্রামের আবাসন প্রল্পের ভেতরের রাস্তাগুলো সব কাদায় একাকার হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ব্যারাক মরিচা ধরে ভেঙে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। ব্যারাকে বসবাসকৃত রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি পরিবার নিয়ে ঘরের ভেতরে খুব কষ্টে আছি। ঘরের ভেতর নিয়ে গিয়ে টিনের চালার ফুটো হয়ে যাওয়া অংশ দেখান।
আবাসন প্রকল্পে বসবাস করা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসনে পুনর্বাসিত করার আগে সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছিল। এ পর্যন্ত তারা নামমাত্র কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। এই আবাসনে দুটি পুকুর রয়েছে। তা অবৈধভাবে ইউএনও অফিস থেকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০১৮ সালে পুকুর দুটি পুনর্বাসিতদের দখলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কর্মসংস্থান না থাকায় লোকজন থাকতে চায় না এই আবাসন প্রকল্পে।
আবাসন পরিবারের সিদ্দিক, খুদু, হামিদ, দুলাল হোসেন, নূর ইসলাম, ওয়াজদুল, কুদ্দুস, লিলিফা, লুৎফা বেগম, ফেরেজা বেগম ও শাহিদা জানান, ধুঁ ধুঁ মাঠের মধ্যে এই আবাসন প্রকল্পে নেই কোনো কর্মসংস্থান। আশপাশে কোনো গ্রামও নেই যে, মানুষের বাড়িতে কাজ করবেন। পুকুরগুলো ৫ বছর আগে অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও আবাসনে বসবাসকারীরা জানালেন, রাস্তা, স্কুলসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা।
আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল জব্বার জানান, আবাসন প্রকল্পের যে রাস্তা রয়েছে, একটু রাত হলে চলাচল বিপজ্জনক। ব্যারাকের ভেতর চলাচলের যে রাস্তা রয়েছে, তা ইট সোলিং না করে দিলে এখানে বসবাস করা খুব কষ্টকর। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা পিচ্ছিল ও কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আবাসনের প্রায় সব ব্যারাক এখন নষ্ট হতে শুরু করেছে। এখানে বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য নেই কোনো বিদ্যালয়। নামাজ পড়ার জন্য ছিল না কোনো মসজিদ। কিন্তু বছর ৩ আগে এখানে বসবাসকারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে একটি টিনের মসজিদ তৈরি করা হয়। টিনের ঘরে দিনে গরমে থাকা যায় না। এরপরও খেয়ে না খেয়ে নানা ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে বর্তমানে ৮০-৮৫টি পরিবার এখানে বসবাস করছে। রাতে ঘরের জানালা খুলে রাখা যায় না। অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা ও নেশাখোররা এসে জানালায় ধাক্কাধাক্কি করে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান জানান, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। আমি আসার অনেক পূর্বে এই আবাসন প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে সেখানে সরেজমিন পরিদর্শনে যাব। ঘুরে এসে সেখানকার সম্যসাগুলো সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'