চুনারুঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু পারাপারে ভোগান্তি
মেঘনা ও শীতলক্ষ্যার অস্বাভাবিক জোয়ারে সড়কে ভাঙন, ঝুঁকিতে শতাধিক বসতঘর
প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেঙে পড়ছে তীরসংলগ্ন পাকা সড়ক। ঝুঁকিতে অর্ধশতাধিক বসতঘর ও কমিউনিটি ক্লিনিক। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বেড়িবাঁধের পাকা সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে কমিউনিটি ক্লিনিক সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বেইলি সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ ওই বেইলি সেতু পারাপারে ভোগান্তি চরমে। কয়েক কিলোমিটার যানজটে নাকাল যাত্রীসাধারণ। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষা রানীগঞ্জ-তারাগঞ্জ-নরসিংদী সড়কে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঘিগাট রবিদাসপাড়া এলাকায় সড়কের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা যায়, সড়কটি ধসে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলসহ ওই এলাকার প্রায় ৪০টি পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে এ সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে এবং বসতবাড়ি যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার থেকে তারাগঞ্জ বাজার হয়ে চরসিন্দুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ৪ মিটার প্রশস্ত পাকা সড়কটির বেশির ভাগ অংশ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও পাকুন্দিয়া এলাকা থেকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা, নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও সিলেট অঞ্চলে শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে থাকে। রানীগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ঘিঘাট রবিদাসপাড়া এলাকায় নদীর পানি থেকে পাকা সড়কের অবস্থান ৫-৬ মিটার উপরে। সম্প্রতি কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে এ সড়কে ধসের সৃষ্টি হয়। পাকা সড়কের কিছু অংশসহ মাটি নদীতে দেবে যায় এবং প্রায় ৭০ মিটার এলাকার ফাটল দেখা দেয়। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। খবর পেয়ে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সড়কটি সংস্কার ও বশতবাড়ি রক্ষায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন জানান, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং স্থানীয়দের সহায়তায় কাঠের বলস্নী দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে সড়কটি সচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রায়হান খান বলেন, দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ইউএনও একেএম লুৎফর রহমান বলেন, শিগগিরই উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ভাঙন এলাকা সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
রামগতি (লক্ষ্ণীপুর) প্রতিনিধি জানান, সম্প্রতি টানা ভারী বর্ষণ ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে জোয়ারের পানি। জোয়ারের পানি প্রচন্ড গতিতে প্রবাহিত হয়ে লক্ষ্ণীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান হোসেন কমিউনিটি ক্লিনিক সড়কটি বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকও ভাঙনের মুখে রয়েছে। এতে করে এই এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকের আসা রোগী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান হোসেন গ্রামের কালির খালের পাশ দিয়ে যাওয়া দুটি ওয়ার্ডের সংযোগ এই গ্রামীন সড়কটি জয়নাল দরবেশ নামে ছিল। এই নামে সড়কটি বিভিন্ন সময় উন্নয়ন করা হয়। আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক সড়ক থেকে সংযোগ এই সড়কের প্রায় ১০০০ মিটারের মাথায় ১৯৯৬ সালে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ হয়। পরে কমিউনিটি ক্লিনিক সড়ক নামে ২০১৫ সালে জেলা পরিষদের একটি প্রকল্প থেকে ১২ ফুট প্রস্থ করে ক্লিনিক পর্যন্ত ইটের সলিং করে সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। সম্প্র্রতি অতি বৃষ্টিপাত ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক সড়কের কালির খালের ওপর নির্মিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সেতু ধসে পড়ে পুরো এলাকা পস্নাবিত হয়। পানির প্রচন্ড গতিতে এবং ওপর থেকে নামা বৃষ্টির পানি ওই খালে প্রচন্ড গতি সৃষ্টি করে। যার ফলে খালের পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক সড়কটি বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ওই এলাকার জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ নেমে আসে। এ ছাড়া খালের দুই পাশে বসত-বাড়িগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে।
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের নবিয়ল মিয়ার বাড়ি এলাকায় আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক সড়কের ওপর সদ্য নির্মিত বেইলি ব্রিজের নিচ দিয়ে উত্তর দিকে কালির খাল প্রবাহিত হয়ে গেছে। ওই সড়ক থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত এই খালের পাশ দিয়ে যাওয়া ইটের সলিং করা গ্রামীণ সংযোগ সড়ক ছিল। জোয়ারের পানিতে খালের পাশে সড়কটি ধসে বিলীন হয়ে গেছে।
চর হাসান হোসেন কমিউিনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) রেশমা বেগম বলেন, সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার সেবাপ্রার্থীরা। এ ছাড়া খাল থেকে ৮-১০ ফুটের মধ্যে থাকায় ক্লিনিকটিও ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন, শিগগিরই সড়কটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে খরস্রোতা খোয়াই নদী। নদীর পূর্ব পাড়ে চারটি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষ, আর পশ্চিম পারে ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে বিভক্ত করেছে এই নদী। আর দুই পাড়ের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা খোয়াই নদীর ওপর এই বেইলি সেতু। অত্যন্ত সরু এই সেতু দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটি সরু হওয়ার কারণে একসঙ্গে দুইটি যানবাহন পারাপার হতে পারে না। ফলে ব্রিজের দুই পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। শহরে আসা-যাওয়ায় মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হয়। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। খোয়াই নদীর উপর ১৯৯৪ সালে এই বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ১২ বছর এর মেয়াদকাল থাকলেও ১৬ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সওজ কর্তৃপক্ষ ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙালেও তা মানছেন না চালকরা। প্রতিনিয়ত বালুভর্তি ট্রাক-ট্রাক্টর চলছে এ ব্রিজ দিয়ে। অনেক সময় যানজটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেতুর পাড়ে বসে থাকতে হয়।
সরেজমিনে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজারো মানুষ চলাচল করছে সেতু দিয়ে। সেতুতে লাগানো স্স্ন্যাব উঠে গেছে, অনেক স্থানে স্স্ন্যাব ভেঙে গেছে। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে রেলিংগুলো। ফলে দিন দিন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সেতুটি।
কয়েকজন অটোরিকশা চালক জানান, প্রতিদিন খোয়াই নদীর উপর বেইলি সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নদীতে পানি বাড়তে থাকলে সেতু নড়াচড়া করে। এছাড়া সেতুর পিলারের বেইজের নিচের মাটি সরে গেছে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।