আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় মন্ডপে মন্ডপে প্রস্তুতি
প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় মন্ডপে মন্ডপে চলছে নানা রকম প্রস্তুতি। তুলিতে দুর্গাপ্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। যেন তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। এদিকে, দুর্গাপূজার মনিটি টিমের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিতসহ প্যান্ডেল সাজানোর কাজ চলছে দ্রম্নতগতিতে। আঞ্চলিক বু্যরো প্রধান, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নীলফামারী ছয় উপজেলার ৮৩১টি পূজামন্ডপে প্রতিমার গায়ে চলছে কাদা মাটির কাজ ও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাশপিয়া তাসরিন জানান, ৬০টি ইউনিয়নে ৮৩১টি মন্ডপের মধ্যে ডিমলায় ৭৬টি, ডোমার পৌরসভাসহ ১০৫টি, জলঢাকা পৌরসভাসহ ১৭৩টি, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১২৯টি, নীলফামারী সদর পৌরসভাসহ ২৬৩টি ও সৈয়দপুর পৌরসভাসহ ৮৫টি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, চলতি মাসের ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব। আর ১৩ অক্টোবর দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলা শহরের হাড়োয়া দুর্গা মন্দির, কালিতলা দুর্গা মন্দির, মিলন পলস্নী দুর্গা মন্দির, ডাইল পট্টি দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির দুর্গা মন্ডপ, কালিতলা দুর্গা মন্দির ও পৌর শহরের দেবির ডাঙ্গা দুর্গা মন্দির ও বাহালী পাড়া কাছাড়ি বাজার দুর্গা মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে অনেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে তুলি ও সাজসজ্জার কাজ করছে।
জেলা শহরের হাড়োয়া কেন্দ্রীয় পূজা মন্দিরের পুরোহিত (ব্রাহ্মণ) মহেষ চন্দ্র্র গাঙ্গুলী জানান, মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সহ অলঙ্কার ও কারুকার্যখচিত মন্ডপ সাজানোর কাজ চলছে। এবারে দেবি আসবেন ঘোড়ায়, যাবেনও ঘোড়ায়। এতে ফলাফল হবে ভালো, শান্তিতে থাকবে প্রজারা।
সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের জমিদার বাড়ি কাছাড়ি মন্ডপের কারিগর সত্যন্দ্র নাথ রায় জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাত-দিন পরিশ্রম করে প্রতিমা সঠিক সময়ে পূজা কমিটিকে হস্তান্তর করাই মূল লক্ষ্য। এখানে সব মিলে ৫৫ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে। হিসাবের খাতায় দেখা যায়, কারিগর ও উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার বেশি লাভ হবে না।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা কমিটির আহ্বায়ক রিন্টু গ্রম্নহ জানান, জেলায় এবার ৮৩১টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এখন কাদা মাটির কাজ শেষ করে তুলির কাজ চলছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, পূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মন্ডপে চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, কমিউনিটি পুলিশিং ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে।
পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবেন পুলিশ,র্ যাবসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা জানান, ভোলায় প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে তুলি দিয়ে প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার কাজ।
জেলার পূজামন্ডবগুলোতে সরেজমিন দেখা গেছে, ভোলার সাত উপজেলার ১০৬টি পূজামন্ডবে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করেছেন মৃৎশিল্পীরা। এখন শেষ সময়ে ব্যস্ত তুলির কাজ নিয়ে।
মৃৎশিল্পী বিষ্ণ চন্দ্র পাল জানান, তিনি ও তার সঙ্গীরা মিলে এ বছর ১২টি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন। অমিত কুমার তারা এবছর ৭টি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ আরও আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে তারা তুলির কাজ করছেন।
অনিল কুমার পাল ও নির্মল পাল জানান, তারা আগে প্রতিমা তৈরি করে সব খরচ বাদে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন কিছুই থাকে না।
ভোলা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, এ বছর ভোলার সাত উপজেলায় ১০৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ভোলা সদরে ২৭টি, বোরহানউদ্দিনে ২০টি, দৌলতখানে ৮টি, লালমোহনে ১৬টি, তজুমদ্দিনে ১৫টি, চরফ্যাশনে ৯টি ও মনপুরায় ১১টি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক জানান, ভোলায় পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পুলিশ মনিটি করবে।
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানাধীন এলাকার পূজামন্ডপগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের মনিটি টিমের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহর নির্দেশে প্রধান সমন্বয়ক নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আজগর আলীর সভাপতিত্বে চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাপ্পির সঞ্চালনায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান ও তারেকুর রহমান। চান্দগাঁও থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম রুবেল, মোহরা ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ কামাল, চান্দগাঁও থানা কৃষকদলের আহ্বায়ক মো. সেলিম, বাবলু নাথ প্রমুখ।
রামগতি (লক্ষ্ণীপুর) প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে ১১টি মন্ডপে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রামগতি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি উদয়ন মজুমদার জানান, উপজেলায় ১২টি মন্ডপে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতীকী পূজা পালিত হবে। প্রতিটি মন্ডপে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব পাহারাদার এবং রাজনৈতিকভাবেও সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
ইউএনও সয়দ আমজাদ হোসেন জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাসহ সবধরনের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।