পাহাড়ি ঢলে মুহূর্তেই পানির নিচে ঘরবাড়ি, তলিয়ে গেছে ফসল

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহূর্তেই পানির নিচে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এতে করে সীমান্তের বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ। রোববার সকালে মহিষখলা ছরা ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে সীমান্তবর্তী অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার মহিষখলা নদী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি উপচে সীমান্তের নিম্নাঞ্চলের ২৫-৩০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকার আমন ধান ও মাছের খামার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢলের পানির প্রবল চাপে অনেক কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে মহিষখলা বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ আছে। বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মোহনপুর গ্রামের ধ্রম্নবরাজ বানাই বলেন, সকালে হঠাৎ করেই তাদের এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে। এরপর মুহূর্তেই সবকিছু ডুবে যায়। বাড়িঘর ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহিষখলা বাজারের ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, সকালে ঢলের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। মহিষখলা বাজার পুরোটাই পস্নাবিত হয়েছে। অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, হঠাৎ করেই ঢলের পানিতে এমন বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নের ৪০ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। সেসব গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বন্ধ রয়েছে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে নদীটির পানি বিপৎসীমার এক দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কুলস্নাগড়া, কাকৈরগড়া, চন্ডিগড় ও গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে। অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিকের ৬৪টি বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৮টির বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামের কৃষক জসিম মিয়া বলেন, তাদের জমির ফসল সব পানির নিচে। তাদের এগুলোই ভরসা ছিল। এমন অবস্থায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। বাকলজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ তালুকদার সাগর বলেন, 'আমার ইউনিয়নের ৮০ ভাগ পরিমাণ ধান জমির নষ্ট হতে বসেছে। পানিবন্দি অনেক মানুষ। আমরা সবসময়ই খোঁজখবর রাখছি।' উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বজলুর রহমান আনসারী বলেন, 'আমরা খবর নিয়েছি, তাতে আমাদের উপজেলার ৮টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গেলেও শিক্ষার্থীরা কেউ আসতে পারছে না।' উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, 'আমাদের ১২৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪টিতে পাঠদান একদমই বন্ধ। সেগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও ১৫-২০ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি। এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে।' দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস জানান, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে বর্তমানে ১০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি যদি কমে যায় তাহলে কৃষকরা রক্ষা পাবেন। কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।