বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

৩১ শয্যার কম জনবলে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
৩১ শয্যার কম জনবলে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

১০ বছর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি জনবল। সে থেকে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। এরপরও রয়েছে জনবল সংকট। এদিকে ৩১ শয্যা জনবলের অনেকগুলো পদ খালি থাকলেও প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৭৫-৮০ জন রোগী। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ খালি থাকার কারণে রোগীদের নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরকার ২০১৪ সালে এই হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও জনবল বৃদ্ধি করেনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যেতে হয়। এতে সাধারণ রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকটের ফলে চিকিৎসকরা রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নামে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও জনবল আছে ৩১ শয্যার চেয়ে কম। এর ওপর প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৭৫-৮০ জন। এরপরও রোগীদের সেবাদানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৩১ শয্যা জনবলের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ২৮টি পদের মধ্যে কর্মরত ২১ জন কর্মকর্তা, দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৪টি পদের মধ্যে ৩৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির ১০৭টি পদের মধ্যে ৭৮ জন কর্মচারী এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১২ জন কর্মচারী।

এ ছাড়াও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোসার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক) চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো খালি রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ইমরান হোসেন বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে বেশিরভাগ রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল অথবা স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। এই হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্র আছে। তবে রেডিওগ্রাফার না থাকায় যন্ত্রটি পড়ে আছে। সাতকানিয়া পৌরসভার রাজিয়া বেগম বলেন, এই হাসপাতালে রোগীদের এতটাই চাপ যে, আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ ছাড়াও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল হাসান বলেন, জনবল সংকটের পাশাপাশি ভবন সংকট রয়েছে। ২ জন ডাক্তারকে এক রুমে বসে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এখানে দৈনিক প্রায় ৭০০ জনের অধিক রোগী আউটডোরে সেবা নেন। বিশেষ করে রোববার ও বুধবার রোগীদের চাপ একটু বেশি থাকে। এ ছাড়াও প্রতিদিন সকালের দিকে রোগীদের চাপ এতটাই বেড়ে যায়, তাদের সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। জনবল সংকট পূরণ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কে এম আবদুলস্নাহ আল মামুন বলেন, ১০ বছর পূর্বে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১১ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিপরীতে মাত্র চারজন রয়েছেন। এ ছাড়াও অধিকাংশ কর্মচারী পদে জনবল সংকট তো আছেই। হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত, ভবন বৃদ্ধি ও জনবল সংকট নিরসনের জন্য দীর্ঘদিন আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তবে এখনো কোনো সাড়া পাইনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে