সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে আগমন করেছিল মর্ত্যলোকে। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবীদুর্গার বন্দনা। ইতোমধ্যে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ পর্যায়ে, এখন প্রস্তুতি চলছে রং-তুলির আঁচড়ে দেবীদুর্গাসহ অন্য দেবদেবীর মূর্তিতে রঙের কাজ। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার প্রতিটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। কারিগররা এখন রং-তুলির আঁচড়ে সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মনের মাধুরি মিশিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত করছেন প্রতিটি দেবদেবীর মূর্তি। পূজার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, মন্ডপ কর্তৃপক্ষ মন্ডপের সাজসজ্জাসহ গেটের সাজসজ্জার কাজেও লোক লাগিয়ে দিনভর কাজ করাচ্ছেন।
কথা হয় দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিমা তৈরির কারিগর দিলীপ মালি ও প্রদীপ সরকারের সঙ্গে। তারা জানান, অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও বেশ কয়েকটি মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছি। শেষ মুহূর্তে এসে কাজের চাপে দম ফেলার যেন ফুসরত নেই।
উপজেলার তালোড়া পৌর এলাকার তুলশী ইন্ডাস্ট্রিজ পূজামন্ডপের মালিক সুভাস প্রসাদ কানু বলেন, তাদের বিশ্বাস, মা রূপী দেবীদুর্গার পূজা করে তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে সব অশুভ শক্তি হতে মুক্তি পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এই দুর্গোৎসবটি যাতে উদ্যাপিত হয়, এর জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুমার দাস বলেন, এ বছর দুপচাঁচিয়ায় ৪০টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদীয় এই উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপিত হয়, সে ক্ষেত্রে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চলছে শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্ততি। প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ করে কারিগররা দেবীদুর্গাসহ সব প্রতিমায় রং-তুলির শেষ আঁচরের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে মন্দিরে মন্দিরে ডেকোরেশনের পাশাপাশি চলছে সাজসাজ্জায় মন্দির প্রাঙ্গন সুন্দর করে তোলার জন্য সজ্জাশিল্পীদের প্রচেষ্টা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবকে ঘিরে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে সর্বাত্মক ব্যবস্থা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ১২৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌরসভায় ১৯টি, কামদিয়া ইউনিয়নে ১০টি, কাটাবাড়ি চারটি, শাখাহারে ছয়টি, রাজাহারে চারটি, সাপমার আটটি, নাকাই ইউপি পাঁচটি, দরবস্ত ১০টি, তালুককানুপুর ইউপি ইউপি ৯টি, হরিরামপুর ১৫টি, ফুলবাড়ি চারটি, রাখালবুরুজ সাতটি, গুমানীগঞ্জ তিনটি, কামারদহ চারটি, কোচাশহর চারটি, শিবপুর চরটি, মহিমাগঞ্জে ১০টি এবং শালমার একটি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর রিমন কুমার তালুকদার বলেন, 'সব মন্ডবের পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আশা করি, সবাই মিলে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে।'
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ষষ্ঠী পূজা থেকে বিসর্জন পর্যন্ত সেনাবাহিনী, আনসার ও পুলিশের পাশাপাশি বিশেষায়িত চারটি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় মন্ডপে মন্ডপে চলছে পূজার প্রস্তুতি। প্রায় সব মন্ডপে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। কিছু কিছু মন্ডপে শেষ হয়েছে রং-তুলির আঁচড় দেওয়ার কাজ। আগামী মঙ্গলবার দেবীর বোধন। পরদিন বুধবার দুর্গাদেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা হবে। রোববার সকালে বড়ঘোপ বাজার কুতুবদিয়া কেন্দ্রীয় কালীমন্দিরে গিয়ে দেখা মিলে প্রতিমা তৈরি শেষ হয়েছে। চলছে মন্ডপ তৈরি, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজের দৃশ্য।
কুতুবদিয়া বড়ঘোপ কেন্দ্রীয় কালীমন্দিরের সভাপতি শ্রী জগদীশ চন্দ্র শীল বলেন, বাঁশখালীর রুবেল শিল্পী রোববার থেকে প্রতিমা রং করা শুরু করেছিলেন।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর উপজেলায় মোট ৪৫টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হয়। এর মধ্যে ঘট ৩১টি এবং ১৪টি প্রতিমা। এবার প্রতিমা পূজা ১২টি ও ঘট ৩২টি। হচ্ছে না দুই মন্দিরে প্রতিমা পূজা। এর মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গামন্দিরের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা মীমাংসা না হওয়ায় পূজা উদ্যাপন বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকায় হচ্ছে না দক্ষিণ ধুরুং নাথপাড়া বিমল নাথের দুর্গামন্দিরের প্রতিমা পূজা।
কুতুবদিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ভোলা নাথ জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে উপজেলার পূজামন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি কাজ। যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এদিকে, নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় বিশৃঙ্খলা হয়নি। আশা করি, এখনো হবে না। এ ছাড়া, প্রতিটি পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরা আওতায় থাকবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং পূজা উদ্যাপন পরিষদের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রশাসনিকভাবে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ থেকে শুরু হবে যৌথ টহল। পুলিশ, আনসার, ব্যাটালিয়ন, গ্রাম পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম, মেডিকেল টিম এবং নৌবাহিনী মাঠে কাজ করবে। এ ছাড়া, পূজামন্ডপে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।