স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা বদরপাশা ইউনিয়নের পূর্ব দাড়াদিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন মুপ্তি ও মাকসুদা বেগম দম্পত্তির একমাত্র ছেলে শাওন মুপ্তি (২২)। পতনের পরে নিশ্চিন্তায় ঢাকা তাঁতীবাজার এলাকার বাসায় মায়ের সঙ্গে ছিলেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁতীবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় শাওন তার কয়েকজন গুলিবিদ্ধ বন্ধুদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে। পরের দিন ৬ আগস্ট ছেলের খোঁজ না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় রক্তমাখা শাওনের নিথর দেহ। তখন থেকেই শুরু হয় শাওনের পরিবারের আহাজারি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, গত ২০ বছর আগে পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে স্ত্রী ও তিন সন্তান ফেলে রেখে পালিয়ে বিয়ে করে অনত্র চলে যান শাওনের বাবা শাহাবুদ্দিন। এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ নেননি। এরপরই শুরু হয় অসহায় পরিবারটি যুদ্ধ। ঢাকায় গিয়ে বাসায় বাসায় কাজ করে নিজের সন্তানদের পড়াশোনা করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় মা মাকসুদা। পরে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলেকে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি দেয়। মা ও ছেলের বেতনের টাকায় মোটামুটি ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। কিন্তু সেই সুখ আর বেশিদিন সইল না তাদের ভাগ্যে। ঢাকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে শরিক হয়ে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরও শান্তিতে বাড়িতে ঘুমাতে পারল না শাওন। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃতু্য হয় তার। পরিবারে বাবা না থাকায় দরিদ্র মা ও দুই বোন অসহায় হয়ে পড়েছে। যৌবন বয়স থেকেই কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে জীবন যুদ্ধে হার না মেনে এখন সব স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় ছেলের ছবি আর কবরের পাশেই পরে শুধু চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে চোখ ভাষাচ্ছেন শাওনের মা।
নিহত শাওন মুফতির ছোট বোন মনিফা আক্তার বলেন, ভাই না থাকায় অনেক কষ্ট হচ্ছে আমাদের। আমাকে নিয়েও ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল।
নিহত শাওন মুফতির মা মাকসুদা বেগম জানান, শাওনের আসা ছিল চাকরি ছেড়ে বিদেশ গিয়ে মা-বোনদের শান্তির সংসার করে .েদবে, জমি কিনবে, থাকার মতো একটা ঘর তৈরি করে দেবে। কিন্তু সেই আসা স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের গুলিতে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমার ধারণা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে শাওন মারা গেছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি আমার ছেলেসহ সব হত্যার বিচার যেন দ্রম্নত কার্যকর করা হয় এবং আমরা যেন খেয়ে বাঁচতে পারি সেই ব্যবস্থা করেন।