তালায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা

তাহিরপুরে তলিয়ে গেছে ৩শ' হেক্টর জমির ধান

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাতক্ষীরার তালায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সড়ক, নৌকা দিয়ে পারাপার -যাযাদি
ম স্বদেশ ডেস্ক টানা কয়েক দিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে একটি বৃহৎ অংশ তলিয়ে গেছে। স্বপ্ন ভেঙে গেছে ঘের মালিক শত শত মানুষের। এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে পাহাড়ি ঢলে ছোট-বড় হাওরে ৩শ' হেক্টর আমন জমির ধান ডুবে গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর- ইলিয়াস হোসেন, তালা (সাতক্ষীরা) জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর, হাজকাটি, জেয়ালা, নগরঘাটা, মাগুরা, খানপুর, হরিহরনগর, শহপুর, বালিয়া, শলিখা, দোহার কানাইদিয়া, রথখোলা, দলুয়া, মাদ্রাসহ শতাধিক গ্রামের অধিকাংশ জায়গা এখন পানিতে নিমজ্জিত। গত কয়েক দিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ৯০৫ হেক্টর মৎস্য ঘের পস্নাবিত হয়ে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা। উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে জানা গেছে, চলতি বছরে তালা উপজেলায় মিঠা ও লোনা পানির ৭ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ করা হয়েছে। যার অনুমানিক লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ থেকে আড়াই লক্ষ কেজি মাছ নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে ৪ হাজার হেক্টর জমির মৎস্য ঘের তলিয়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে তালা উপজেলার ১১শ' হেক্টর আয়তনের মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে, উপজেলার সব মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণের বর্ণনা দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তালা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা। জলাবদ্ধতা নিরসনে তালা উপজেলা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে তালার গোপালপুর স্স্নুইস গেটে পলি অপসারণের জন্য ভাসমান ড্রেজার দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নগরঘাটা এলাকার মৎস্যচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, তার ৭ বিঘা মিঠা পানির ঘের তলিয়ে সব মাছ চলে গেছে, এতে করে তার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া খলিষখালির নূরুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া ফয়সাল হোসেন, মাগুরার পরিমল মন্ডল, তালা সদরের আসাদুজ্জামান জানান, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাদের মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধের ওপর এখন তিন চার ফুট পানি সব মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বেতনা নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে মূলত এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পানি সরবরাহের সংযোগস্থল ও বিভিন্ন খালে নেট পাতা অপসারণ ও বাঁধ অবমুক্তির কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ রাসেল জানান, 'এই উপজেলা দেশের উপকূলীয় এলাকা এখানে মূলত পলি মাটি জমাট হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমার পক্ষ থেকে পানি সরবরাহের জন্য যেসব এলাকায় বর্তমানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেই প্রতিবন্ধকতা উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে। বাবরুল হাসান বাবলু, (তাহিরপুর) সুনামগঞ্জ জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যায়, তলিয়ে গেছে ৩শ' হেক্টর আমন জমির ধান। অপরদিকে জাদুকাটা নদীর পানি আনোয়ারপুর ব্রিজের পূর্ব পাশ তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে রোববার সকাল থেকে সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক আমন চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, গত কয়েক দিনে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শ্রীপুর উত্তর, বড়দল উত্তর, বাদাঘাট ও বালিজুরী ইউনিয়নের একাধিক হাওরে আমন জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তাদের ধারণা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৪শ' হেক্টর জমির ধান অসময়ের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। বলদা হাওরপার বড়দল গ্রামের কৃষক মারজানুল হক জোসেফ জানান, এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তার ধান পুরোপুরিভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে। লুভার হাওর পার পাতারগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, এ বছর তিনি ১১ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। ফসলও ভালো হয়েছিল। বর্তমানে তার রোপণকৃত ধান পানির নিচে। উপজেলা কৃষি অফিস উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমদ জানান, 'ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে আমার ইউনিয়নের রহমতপুর, বিন্নাকুলী, পাতারগাঁওসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হাওরে আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।' উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান উদ-দৌলা বলেন, 'আকস্মিক বন্যায় তাহিরপুর উপজেলায় আমন জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলতে পারছি না। আমদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছেন।'