এক সময় গ্রামগঞ্জে ডোবা-নালায় এবং খাল-বিলে জাতীয় ফুল শাপলার সমারোহ ছিল দেখার মতো। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার কুড়ুলগাছির ঐতিহ্যবাহী রায়সা বিল থেকে শাপলা-শালুক বিলুপ্ত হতে চলেছে। দামুড়হুদার কুড়ুলগাছির ঐতিহ্যবাহী রায়সা বিল তার চিরচেনা রূপ হারিয়ে যেতে বসেছে।
রায়সা বিলে এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা ফুল ও গুল্মলতা। এর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর লাল ও বেগুনি শাপলা ফুলের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমে বিলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমানকাল ধরেই শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে পাওয়া যেত শাপলা ফুলের মধু (পদ্মমধু), শালুক আর ঢেপের খইয়ের মোয়া।
বিলাঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষ বিল থেকে পদ্মমধু, শাপলা-শালুক ও মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন শুকনো মৌসুমে রায়সা বিলে পানি কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ, শাপলা, গুল্মলতা ও জলজ প্রাণী।
বর্ষাকাল শুরু থেকে শরৎকালের শেষ ভাগ এ সময় পর্যন্ত রায়সা বিলে শত শত মিটারের পর মিটার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত নয়নাভিরাম লাল, বেগুনি ও সাদা শাপলা। বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদমাখা সকালে বিলে চোখ পড়লে রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। বিলে শাপলার নয়নাভিরাম এই দৃশ্য দেখার জন্য ছুটে আসতেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এখনো বিলপাড়ের অনেকেই নৌকা নিয়ে বিল থেকে শাপলা তুলে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
গত শনিবার সকালে একদল শিশু রায়সা বিল থেকে বিভিন্ন রংয়ের শাপলা তুলতে যায়। বেশি শাপলা পায়নি, তাই অনেকেই মন খারাপ করে বাড়ি যাচ্ছে, এ সময়ম আইশা, তাবাসুম ও রাব্বি বলেন, 'গত বছর অনেক শাপলা পেয়েছিলাম বিলে। এ বছর খুব বেশি নেই। আমরা এগুলো নিয়ে অনেক সময় খেলা করি, আবার রান্না করেও খাই।'
জানা যায়, সাদা বর্ণের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লালরঙের শাপলা ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল খুবই প্রিয়। জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের ফসল আবাদে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ দখল ও শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বিলগুলো থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে শাপলা ফুল। এখন বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা। আগে অনেকে সৌন্দর্যের জন্য পুকুরে চাষ করতেন লাল শাপলা। এখন পুকুরে বিদেশি কার্প জাতীয় মাছ চাষ হওয়ায় বেগুনি ও লাল শাপলা বিলুপ্তির পথে।