দুর্গাপূজা উপলক্ষে উৎসবে নেই কমতি চলছে রং-তুলি আর সাজসজ্জার কাজ
প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। পূজা ঘিরে উৎসবের কমতি নেই। মন্ডপে মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের রং-তুলি আর সাজসজ্জার কাজ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরায় গত বছরের তুলনায় এবার ৫৬টি মন্ডপে পূজা কমেছে। জেলার ৫৬২টি মন্ডপে রং ও প্রতিমা সাজানোর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে মহালয়ের মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের আগমনী বার্তা দিয়েছেন মহিশাশুরুমন্দিনী মা দুর্গা। হাতে সময় নেই। তাই দিন-রাত কাজ করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মন্ডপে মন্ডপে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব। জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, এবার সাতক্ষীরার সাত উপজেলা ও দুই পৌরসভায় ৫৬২টি মন্ডপ এবং মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৯টি, আশাশুনিতে ৯৫টি, দেবহাটায় ২১টি, কলারোয়ায় ৩৯টি, তালায় ১৯৬টি, কালীগঞ্জে ৪৯টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ৬৩টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে রং-তুলি আর সাজসজ্জার কাজ। তবে প্রতিবছর সাতক্ষীরায় দুর্গাপূজার সংখ্যা বাড়লেও এ বছর কমেছে। গত বছর সাত উপজেলায় দেবীদুর্গা পূজা পেয়েছেন ৬১৮টি মন্ডপে। আর এ বছর উদযাপিত হবে ৫৬২টি মন্ডপে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শঙ্কা থাকায় ও জলাবদ্ধতার কারণে মন্ডপে পূজা কমেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা সহ-সভাপতি ও কাটিয়া কর্মকারপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি গৌর দত্ত বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার, দোকান ও বাড়িঘরে লুটপাট ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘুরা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শঙ্কা থাকায় এবং সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় সাতক্ষীরা জেলায় গত বছরের তুলনায় ৫৬টি মন্ডপে পূজা কমেছে। তারপরও প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সাতক্ষীর পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিমা তৈরি, পূজা উদযাপন ও বিসর্জনকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশরাফুল হক বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনমনে আস্থা ও মনোবল বৃদ্ধিতে সীমান্তবর্তী এলাকার পূজামন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা টহল কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পূজা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজিবি টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ঢাকে কাঠি বাজিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাৎসব। সারা দেশের মতো বাউফলেও চলছে দুর্গোৎসব পালনের প্রস্তুতি। এ বছর বাউফলে ৬৫টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হবে। পটুয়াখালী জেলায় সর্বাধিক পূজা হচ্ছে বাউফলে। শেষ মুহূর্তে বাউফলের বিভিন্ন মন্ডপে চলছে শিল্পীর রং-তুলির শেষ আঁচড়। শুরু হয়েছে আলোকসজ্জার কাজ। নির্বিঘ্নে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনায় যাতে দুর্গোৎসব উদযাপিত হতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ প্রতিটি পূজা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। পূজার নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপি, পুলিশ, র?্যাব, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড থাকবেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সনজিত কুমার সাহা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। পালা করে তারা পাহারা দেবেন। সরকারের কাছে দাবি ছিল ৫ দিনের পূজায় অন্ত: ২ দিন ছুটি দেবেন। কিন্তু সেটা পাওয়া গেল না। পূজার সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবাহের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সাধারণ সম্পাদক অতুল চন্দ্র পাল জানান, বাউফল একটি শিক্ষিত-নন্দিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনপদ। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেছেন। মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও প্রতিটি মন্ডপের পূজা কমিটি সার্বিক বিষয়ে নজরদারি করবেন।
বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, পূজা শুরুর আগেই সব মন্ডপ পুলিশ টহলের আওতায় আনা হয়েছে। সাদা পোশাকেও নজরদারি করা হচ্ছে।
ইউএনও বশির গাজী জানান, পূজার উৎসবে যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম থাকবে।